বেঙ্গালুরু: শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে চলেছে চন্দ্রযান ২-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ‘সফট ল্যান্ডিং’। ইসরোর বিজ্ঞানীদের মতে, এই অবতরণের সময় বা অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা যেতে পারে, এটিই হল সবচেয়ে জটিল বিষয়। কারণ, সঠিক ল্যান্ডিংয়ের ওপরই নির্ভর করছে এই অভিযান--তার এতদিনের পরিকল্পনা, প্রচেষ্টা, পরিশ্রমের সাফল্য। কিন্তু, কীভাবে হবে ওই ল্যান্ডিং প্রক্রিয়া? দেখে নেওয়া যাক--
ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, ল্যান্ডারের মধ্যে থাকা আটটি বিশেষ যন্ত্রপাতির সমন্বয় ও মিলিত প্রক্রিয়ার সমষ্টিগত ফল সঠিক হলেই ‘সফট ল্যান্ডিং’ সম্পন্ন হবে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ল্যান্ডারে তিনটি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এই তিনটি ক্যামেরা হল -- ল্যান্ডার পজিশন ডিটেকশন ক্যামেরা(এলপিডিসি), ল্যান্ডার হরাইজন্টাল ভেলোসিটি ক্যামেরা(এলএইচভিসি) এবং ল্যান্ডার হ্যাজার্ডাস ডিটেকশন অ্যান্ড অ্যাভয়েডেন্স ক্যামেরা(এলএইচডিএসি)।
এই তিন ক্যামেরার প্রধান কাজ হল ‘বিক্রম’ যাতে সঠিকভাবে সফট ল্যান্ডিং করতে সক্ষম হয়, তা নজরে রাখা এবং একইসঙ্গে নিশ্চিত করা। এছাড়া, ল্যান্ডারে থাকবে ‘কেএ ব্যান্ড’ অল্টিমিটার-১ এবং ‘কেএ ব্যান্ড’ অল্টিমিটার-২। এই ‘কেএ’ শব্দের অর্থ হল-কার্ৎজ আবভ ব্যান্ড। কার্ৎজ ব্যান্ড হল তড়িৎ-চুম্বকীয় স্পেকট্রামের মাইক্রোওয়েভ ব্যান্ড। এর পাশাপাশি রয়েছে একটি লেজার অল্টিমিটার (লাসা)। এই যন্ত্রটি চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করবে। যেমন চাঁদের পৃষ্ঠতলের চরিত্র কেমন। এই যন্ত্রটি চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে থাকা অর্বিটারের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করবে।
‘সফট ল্যান্ডিং’ সম্পন্ন করার জন্য ল্যান্ডারে পাঁচটি ৮০০এন লিক্যুইড থ্রাস্টার ইঞ্জিন রয়েছে। রয়েছে টাচডাউন সেন্সর এবং সোলার প্যানেল। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে যখন ‘বিক্রম’ ১০০ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু করবে, সেই সময় ‘রাফ-ব্রেকিং’ পর্ব শুরু করা হবে। এর আওতায় প্রথমে চতুষ্কোন-ল্যান্ডারের একধারে যে চারটি ইঞ্জিন রয়েছে, প্রথমে সেগুলিতে প্রজ্জ্বলন ঘটানো হবে।
এই ইঞ্জিনগুলি চালু হতেই ল্যান্ডার সরাসরি তীব্র গতিতে চাঁদের দিকে অবতরণ শুরু করবে। এই সময়টি হল ‘অ্যাবসোলিউট লেভিগেশন ফেজ’। এই পর্যায়ে ‘কেএ ব্যান্ড’ অল্টিমিটার-১, লেজার অল্টিমিটার এবং ল্যান্ডার পজিশন ডিটেকশন ক্যামেরা চালু হবে। এই যন্ত্রগুলি নিশ্চিত করবে যাতে অবতরণের সঠিক পজিশনে রয়েছে ল্যান্ডার এবং চন্দ্রপৃষ্ঠে একেবারে সমানভাবে তা নামবে। দক্ষিণ মেরুর যেখানে অবতরণ করার কথা যানের, সেখানে সমতলের খোঁজ চালাবে পজিশন ডিটেকশন ক্যামেরা।
ল্যান্ডার যখন নামতে নামতে চন্দ্রপৃষ্ঠের ৪০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছবে, তখন ল্যান্ডারের নীচে দুদিকে থাকা ২টি ইঞ্জিন চালু করা হবে। যা নীচ থেকে ওপরের দিকে থ্রাস্ট (চাপ) দেবে। যাতে, অবতরণের গতি একধাক্কায় বহুগুণ কমে যাবে। এরপর, ধাপে ধাপে লাসা, ‘কেএ ব্যান্ড’ অল্টিমিটার-২ এবং এলএইচভিসি চালু হবে। কিছুক্ষণ পর, একটি রি-টার্গেটিং পর্ব হবে। সেখানে ফের একবার লাসা, ‘কেএ ব্যান্ড’ অল্টিমিটার-২, এলএইচভিসি। একইসঙ্গে চালু হবে এলএইচডিএসি। সবকটি যন্ত্রের সমন্বয়ে ‘পারফেক্ট ল্যান্ডিং’ সম্পন্ন হবে।
এরপর, চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ঠিক যখন ল্যান্ডার মাত্র ১০ মিটার ওপরে থাকবে, তখন চালু করা হবে মাঝের বড় ইঞ্জিন। যা তীব্র ‘ব্যাক-থ্রাস্ট’ দেবে। তখন অবতরণের গতিবেগ অনেকটাই কমে যাবে। বলা যেতে পারে, গতি একেবারে মন্থর হয়ে পড়বে। যার জেরে, ঠিক পালকের মতো ‘বিক্রম’ চাঁদের মাটি ছোঁবে।