নয়াদিল্লি: বছর দুয়েক আগে বছর পঁয়ত্রিশের যুবক কার্তিক যখন শোনেন যে তাঁর পাশের বাড়িতে এক হেড কনস্টেবল আসছেন,তখনও তিনি জানতেন না যে এই ব্যক্তিই একদিন তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ের জীবনদাতা রূপে সামনে আসবেন। বাস্তবে ঘটল সেটাই। চেন্নাইয়ের ঘটনা। নন্দনবাক্কাম থানার হেড কনস্টেবল পি সেনথিল কুমার এবং পুলিশ ইনস্পেক্টর এম থঙ্গরাজ এক বেসরকারি হাসপাতালে কার্তিকের মেয়ের ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য জোগাড় করে দিলেন পাঁচ লক্ষ টাকা।
স্ত্রী প্রিয়ঙ্কা এবং কন্যা কভিষ্কাকে নিয়ে গুডুভানচেরি এলাকায় কার্তিকের বাস। একটা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু লকডাইনে দোকান বন্ধ, কাজও গিয়েছে। কন্যা কভিষ্কা হৃৎপিন্ডে ব্লক নিয়েই জন্মেছে। ছোট থেকেই ওষুধ চলছে। তিনবার অ্যানজিওগ্রাম হয়েছে। কিন্তু তাতে তো ব্যাপারটা সেরে যাবে না। সেনথিল কুমার বছর দুয়েক আগে কার্তিকদের পাশের বাড়িতে আসেন। সকলের সঙ্গে পরিচয় হয়।
সেনথিল বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে লকডাউনের আগে চিকিৎসকরা কার্তিককে অ্যানজিওগ্রাম করানোর পরামর্শ দেন। কিন্ত সে পরামর্শ টাকার অভাবে কার্তিককে বাতিল করতে হয়।আমি তখন ৩০ হাজার টাকা দিই অ্যানজিওগ্রাম করার জন্য।‘
তখনকার মতো বিষয়টি থামলেও আবার অসুস্থ হতে থাকে মেয়েটি। লকডাউনে এক স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি অবিলম্বে ওপেন হার্ট সার্জারি করতে বলেন। সেনথিল বলেন, ‘আবার আমার কাছে হাত পাতবে কেমন করে, এই লজ্জায় কার্তিক আমায় কিছু বলেনি। আমি পড়শিদের থেকে সব শুনে টাকার ব্যবস্থা করতে বেরিয়ে পড়ি।ইনস্পেক্টর থঙ্গরাজের সঙ্গে কথা বলি। আমরা ঠিক করি মেয়েটিকে যে করেই হোক বাঁচাতে হবে।‘
দুই পুলিশকর্মী এক বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে জানেন, কত খরচ হতে পারে। তারপর ব্যক্তিগত উদ্যোগে যোগাড় করেন ৪৫ হাজার টাকা। সরকারি ওয়েলফেয়ার স্কিম থেকে মেলে ১লাখ ২৫ হাজার টাকা।স্পনসরদের থেকে আসে ৩ লক্ষ টাকা।সাত ঘণ্টা ধরে অপারেশন চলে। ১৫ দিন আইসিইউ এবং ১৫দিন সাধারণ বেডে থাকতে হয় কভিষ্কাকে। ঘটনা জানতে পারার পর থানার সমস্ত কর্মী কোনও না কোনও সময়ে কার্তিকের সঙ্গে এসে দেখা করে গিয়েছেন।কার্তিক বলেন, ‘ছোটবেলায় একবার এক পুলিশের থেকে খারাপ ব্যবহার পেয়েছিলাম। কিন্তু খাকি উর্দিধারী কেউ আমার মেয়েকে একদিন বাঁচাবেন ভাবতেও পারিনি।‘