রায়পুর: বাড়ি থেকে সবচেয়ে কাছের হাসপাতাল ১৫ কিমি দূরে। সেখানে যেতে হয় নদী পেরিয়ে। বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা নদী পেরোতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। শেষপর্যন্ত রান্নার বাসনের উপর বসিয়ে নদী পার করানো হয়। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। হাসপাতালে গিয়ে মৃত সন্তান প্রসব করলেন ছত্তীসগঢ়ের ওই মহিলা। অভিযোগ, হাসপাতালে কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ওই মহিলাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ফলেই গর্ভে সন্তানের মৃত্যু হয়। হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলার স্বামী।


এই ঘটনা ঘটেছে ১৩ জুলাই। ওই মহিলার স্বামী হরিশ ইয়ালাম জানিয়েছেন, ‘আমাদের চার বছর আগে বিয়ে হয়। এটাই আমাদের প্রথম সন্তান ছিল। আমাদের বাড়ি  বিজাপুর জেলার সদর থেকে ৪০ কিমি দূরে মামিদগুড়া গ্রামে। আমার স্ত্রী লক্ষ্মী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় আমরা মিনুর গ্রামে ওর বাপের বাড়িতে ছিলাম। কারণ, সেখান থেকে ভোপালপটনমের হাসপাতাল কাছাকাছি। বিজাপুর শহর থেকে ৪৩ কিমি এবং ভোপালপটনম থেকে ১৫ কিমি দূরে মিনুর গ্রাম। গোরলা গ্রাম পঞ্চায়েত ও মিনুর গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে চিন্তাওয়াগু নদী। বর্ষায় ফুলেফেঁপে উঠেছে নদী। পাড়ও অত্যন্ত পিছল হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মীকে একটা বড় বাসনের পাত্রে বসিয়ে নদী পার করাতে হয়। গোরলা পৌঁছনোর পর আমরা অ্যাম্বুল্যান্স পাই। বিকেল তিনটেয় আমরা হাসপাতালে পৌঁছে যাই। কিন্তু কর্তব্যরত যে নার্স ছিলেন, তিনি আমাদের অপেক্ষা করতে বলেন। লক্ষ্মীর পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেননি ওই নার্স। রাত আটটায় শিফট বদল হয়। লক্ষ্মী তখন যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কাঁদছিল। আমি সেই সময় কর্তব্যরত নার্সকে বলি, আমাদের কোনওভাবে সাহায্য করতে না পারলে বিজাপুরের হাসপাতালে রেফার করে দিন। কিন্তু তিনি আমাদের বলেন, ‘শান্ত থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনাদের সন্তান প্রসব হবে।’ রাত ৯টা নাগাদ লক্ষ্মীর রক্তচাপ কমতে শুরু করে। সেই সময় নার্সরা এসে তাঁকে বকাবকি করতে থাকেন। এরপর তাঁরা পেটে চাপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু হঠাৎ থেমে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। কিন্তু চিকিৎসক গোপী কিষণ আসেন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। এরপর তিনি অস্ত্রোপচার করেন এবং মৃত সন্তান প্রসব করে লক্ষ্মী। চিকিৎসক বলেন, আর আধঘণ্টা দেরি হলে লক্ষ্মীকেও বাঁচানো সম্ভব হত না।’

হরিশ আরও বলেছেন, স্থানীয় মানুষের আরও ভাল চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। তিনি ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। হাসপাতালের কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তিনি কালেক্টরের কাছে অভিযোগ জানাবেন।

ব্লক মেডিক্যাল অফিসার অজয় রামটেকে জানিয়েছেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সেই রাতে কী হয়েছিল, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই হাসপাতালের তিন কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হয়েছে।’ হরিশ অবশ্য জানিয়েছেন, কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।