নয়াদিল্লি: সোমবার মধ্যরাতের একটু পরেই লোকসভায় পাশ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএবি। ওই বিল পাশ হওয়ার ফলে প্রতিবেশী তিন দেশের অ-মুসলিম সংখ্যালঘু শরণার্থীরা দেশের নাগরিকত্ব পাবেন বলে জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর দাবি, ওই আইনের সঙ্গে এ দেশের মুসলিমদের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রসঙ্গত, বিল পেশ হওয়া থেকেই এই বিলকে মুসলিম বিরোধী বলে এসেছে বিরোধীদের একাংশ।
বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১ টি, বিপক্ষে ৮০টি। এখন রাজ্যসভা থেকে বিলটি পাশ হওয়ার অপেক্ষা।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই বিল সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

১. সংবিধানের বিভিন্ন ধারা তুলে ধরে এই বিরোধিতা করে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, এআইএমআইএম, আইইউএমএল, এআইইউডিএফ, বিএসপি, সমাজবাদী পার্টি, আম আদমি পার্টি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস।
২. এই বিল নিয়ে বিতর্কের মাঝে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশ্বাস দেন, মোদি সরকারের অধীনে কোনও ধর্মের লোকেদের কোনও ভয় পাওয়ার কারণ নেই। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, এই বিলটি প্রতিবেশী দেশগুলিতে নিপীড়নের শিকার হওয়া সংখ্যালঘুদের স্বস্তি দেবে।
৩. অমিত শাহ বলেন, সারা দেশে এনআরসি চালু করা হবে। যখন এনআরসি হবে, তখন একজনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এদেশে থাকবে না।
৪. অমিত শাহ বলেন, যদি ১৯৪৭ এ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না হত, তাহলে এই বিলের প্রয়োজন ছিল না।
৫. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,‘বিলের বিতর্কে বিরোধীদের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে ওই বিল এনে মুসলিমদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিয়ে জানাচ্ছি, ওই বিল পাশ হলে এ দেশের মুসলিমদের কোনও ভয় নেই। ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের সঙ্গে ওই বিলের কোনও সম্পর্ক নেই। এ দেশের মুসলিমদের সঙ্গে কোনও ভেদাভেদ হবে না।’
৬. বিরোধীদের অভিযোগ, এই বিল সংবিধানের ১৪ নম্বর পরিচ্ছেদে উল্লিখিত, সব নাগরিকের সমানাধিকারের বিষয়টি লঙ্ঘন করে। কিন্তু এই অভিযোগ নস্যাৎ করে অমিত শাহ বলেন, এই বিলটি নির্যাতিত মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলছে, এতে সংবিধানের বিধিলঙ্ঘনের প্রশ্ন নেই।
৭. অমিত শাহ বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভাজন হয়েছে। সেই কারণে এখন ধর্মের ভিত্তিতে সেই বিভাজনের রাজনীতি করতে হচ্ছে তাঁদের। শাহ বলেন, ‘১৯৫০ সালের নেহরু-লিয়াকত চুক্তি যদি সফল ভাবে বাস্তবায়িত হত, তা হলে ওই বিল আনার প্রয়োজন হত না।’
৮. সিএবি নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের ক্ষোভ ও আপত্তিকে প্রশমিত করতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, মোদি সরকার এই অঞ্চলের মানুষের রীতিনীতি ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মণিপুরকে ইনার লাইন পারমিট এলাকার অধীনে আনা হবে, যেখানে প্রস্তাবিত আইন প্রযোজ্য হবে না।
৯. এই বিলটি ছিন্ন করে ওয়েইসি বলেন, এটি মুসলমানদের "রাষ্ট্রহীন" করার লক্ষ্যে তৈরি এবং এটি আরও একবার দেশকে বিভাজনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।