কলকাতা: কাল, মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই থেকে মহাকাশে দেখা যাবে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। তীব্র গতিবেগে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসবে ধূমকেতু। তার আলোর ছটার পরিধি কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। আর সেই দৃশ্য দেখা যাবে খালি চোখেই। ধূমকেতুর নাম সি/২০২০ এফ৩। পোশাকি নামকরণ করা হয়েছে নিওওয়াইস।


বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুরন্ত গতিতে ধূমকেতুটি পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে। সাধারণত এ ধরনের দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে একেবারে খালি চোখেই দেখা যাবে সেই দৃশ্য। কাল, মঙ্গলবার থেকে কলকাতাতেও দেখা যাবে এই ধূমকেতু। রোজ সূর্যাস্তের পর উত্তর-পশ্চিম আকাশে জ্বলজ্বল করে উঠবে। টানা ২০ দিন সূর্যাস্তের পর ২০ মিনিট করে দেখা যাবে সেটি। প্রত্যেকদিন একই জায়গায় দেখা যাবে।

বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা দেবীপ্রসাদ দুয়ারি এবিপি আনন্দকে ফোনে বললেন, ‘গত ২৭ মার্চ ধূমকেতুটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। সূর্যকে একবার চক্কর মেরে পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসছে। এটি খুব উজ্জ্বল। খালি চোখেই দৃশ্যমান হবে। জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে দেখা যাচ্ছিল। তবে সেটা সূর্যোদয়ের আগে দেখা যাচ্ছিল উত্তর-পূর্ব আকাশে। ১৪ জুলাই থেকে দেখা যাবে উত্তর-পশ্চিম আকাশে। সূর্যাস্তের কিছুটা পর থেকে।‘

নিওওয়াইস পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে আগামী ২২ জুলাই। সেদিন ভূপৃষ্ঠ থেকে এর দূরত্ব হবে ১০ কোটি ৩৫ লক্ষ কিলোমিটার। সূর্যাস্তের পর উত্তর-পশ্চিম দিগন্তের ১০-১৫ ডিগ্রি ওপরে দৃশ্যমান হবে। দেবীপ্রসাদবাবু বলছেন, ‘এর আগে ১৯৯৭ সালে হেলবোপ ধূমকেতু পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতার আশপাশ থেকে দেখা গিয়েছিল। এরপরেও কিছু ধূমকেতু এসেছে। তবে দূরবীন ছাড়া সেগুলি দেখা সম্ভব হয়নি। নিওওয়াইসকে কিন্তু খালি চোখেই দেখা যাবে।'

ধূমকেতু সৌরজগতের বাসিন্দা। তবে বহির্ভাগের। যেখানে তাপমাত্রা ভীষণ কম। চারদিকে বড় বড় বরফের চাঙড় ভেসে বেড়ায়। জলীয় বরফ, কার্বন ডাই অক্সাইড বরফ, মিথেন বরফের চাঙড় ভেসে বেড়ায়। এগুলির আয়তন ৫ থেকে ১০-১২ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। এই বরফের চাঙড়গুলি যখন সূর্যের আকর্ষণে, সূর্যের চারিদিকে উপবৃত্তাকার পথে ঘুরে যায়, সূর্যের তাপে বরফ গলে গিয়ে বাস্পীভূত হয়ে কোটি কোটি কিলোমিটার লম্বা ঝাঁটার মতো দেখতে লেজ সৃষ্টি করে। দেবীপ্রসাদবাবু বলছেন, ‘ধূমকেতু সূর্যের যত কাছে থাকে, তত এই লেজ দৃশ্যমান হয়। হিসেব কষে দেখা গিয়েছে, ৬৭৬৬ বছর পর আবার এই নিওওয়াইস সূর্যের কাছাকাছি আসবে।'