ইসলামপুর: মাস খানেক আগের ঘটনা, করোনায় মায়ের কাজ চলে যাওয়ায় জুতো সেলাইয়ের সরঞ্জাম নিয়ে বাজারে বসতে হয়েছিল কৃতী সন্তানকে। ঘটনা মালদার। কনুয়া হাইস্কুলের ফার্স্ট বয় সঞ্জয় রবিদাসের দৈনদশা এই ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা নাগরিক সমাজকে। এরপর সাহায্য এসেছে ঠিকই, তবে আমূল পরিবর্তন হয়নি। এবার সামনে এল এমনই আরেক হৃদয়বিদারক ছবি। অসুস্থ বাবা, মায়ের পথ্য জোগাড়ে রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতে হচ্ছে ভূগোলের অধ্যাপককে। ঘটনা মুর্শিদাবাদের।
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে মুর্শিদাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয়ে ভূগোলের অতিথি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আব্দুল উকিল। বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ুয়াদের ভূগোলের পাঠ দিতেন আব্দুল। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর তিনি ওই কলেজেরই অধ্যাপক। তাঁর হাত ধরেই ইসলামপুরের ওই কলেজে ভূগোলের অনার্স কোর্স শুরু হয়। ২টো ব্যাচও ইতিমধ্যে পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছে। করোনার প্রকোপে সেই অতিথি অধ্যাপককেই কিনা জোগালির কাজ করতে হচ্ছে!
আব্দুল উকিলের কথায়, “বাড়িতে বাবা-মা দুজেনরই সুগার। আমার কলেজ মানবিক। তাই প্রতিমাসে শর্তসাপেক্ষ ৫ হাজার টাকা করে দেয়। আমার স্পাইনে সমস্যা, তার ওপর বাবা-মায়ের ওষুধ, ওই টাকায় কুলোতে পারি না। তাই রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতে হচ্ছে।” অবস্থা এতই করুণ যে, রোজে দেড়শো টাকাতেও কেউ কাজে নিচ্ছে না। ডোমকল বসন্তপুর কলেজের এই প্রাক্তন ছাত্রের কথায়, “গ্রামেই রাজমিস্ত্রির কাজ করছি। দিনে দেড়শো টাকায় হেল্পারের কাজ করতে হচ্ছে, তাও কেউ কাজে রাখছে না। পাটের জমিতে কাজ করলে দুশো, আড়াইশো টাকা পাওয়া যায়। পরিস্থিতি এমনই, যে হাতে জমি জায়গা থাকলেও কাজ করানোর জন্য তাঁদের টাকা নেই। তাই কেউ কাজেও রাখতে পারছে না।”
এবছরই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন অতিথি শিক্ষকদের নির্দিষ্ট বেতন দেওয়া হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই ঘোষণা এখনও কার্যকর হয়নি। শিক্ষা দফতর কিছুটা অগ্রসর হলেও করোনা গোটা পরিস্থিতিকেও থমকে রেখেছে। রাজ্যের বহু কলেজে অতিথি শিক্ষকরা বেতন তো দূর অনলাইন ক্লাসের টাকাও ঠিক করে পাচ্ছে না। এই অবস্থায় আব্দুলের কলেজ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে ঠিকই, তবে সেখানেও রয়েছে অনিশ্চয়তা। সরকার মাসিক বেতন দিলে সেখান থেকেই প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে কেটে নেওয়া হবে। আর এখানেই আব্দুলের মতো আরও অনেকেরই প্রশ্ন, সরকার কী আদৌ তাঁদের মাসিক পারিশ্রমিক দেবে? দিলেও সেটা কবে?