নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতে ত্রাহি ত্রাহি রব তুলেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তর সংখ্যা। আর এর প্রভাব দুর্বল স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে কার্যত বিপর্যস্ত করে তুলেছে। গত বছর দেশে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ ছিল ১০ সেপ্টেম্বর। ওই সংখ্যা থিল ৯৭,৪০০। কিন্তু এখন দৈনিক প্রায় এর চার গুণ আক্রান্তর সংখ্যা। দেশে করোনা সংক্রমণের এই হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
চলতি বছরের ১৪ মার্চ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬,০০০। সেখান থেকে মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২৫ গুণ বেড়ে চার লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিপর্যয়ের আঁচ কেউ করতে পারেনি।
অতিমারীর এই দাপট গভীর প্রভাব ফেলেছে মানুষের মনে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে।
চলতি পরিস্থিতি নিয়ে চলতি সময়ের অনুভূতি জানতে সিটিজেন এনগেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম লোকালসার্কেলস একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, কোভিডের এই দ্বিতীয় ঢেউয়ের দাপটে ৬১ শতাংশ ভারতীয়ই ক্ষুব্ধ, হতাশ, অবসাদগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন।
আক্রান্তের সংখ্যার বিপুল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন থেকে শুরু করে ওষুধের অভাব ও শেষকৃত্যের জায়গায় ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই রব। ফলে সমস্ত পরিস্থিতি রীতিমতো হৃদয়বিদারক। বহু রাজ্যেই লকডাউনের ধাঁচে নিয়ন্ত্রণ জারি হয়েছে। এরইমধ্যে লোকজন তাঁদের জীবিকা, চাকরি থেকে শুরু করে অতিমারীর বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সমীক্ষায় তাঁদের অনুভূতি সংক্রান্ত প্রথম প্রশ্নের উত্তরে অংশগ্রহণকারীদের ২৩ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তাঁর উদ্বিগ্ন, ৮ শতাংশ জানিয়েছেন, অবসাদগ্রস্ত, হতাশ বা দুঃখিত, ২০ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ, ১০ শতাংশ বলেছেন, খুবই ক্ষুব্ধ। ৭ শতাংশ বলেছেন, শান্ত বা অনুদ্বিগ্ন। সমীক্ষা অনুসারে, ২৮ শতাংশ বলেছেন, আশাবাদী ও ইতিবাচক। ৩ শতাংশ উল্লিখিত কোনও কিছুই নয় বলে জানিয়েছেন। ১ শতাংশ কোনও মতামত জানাননি।
সমীক্ষার সামগ্রিক ফল অনুসারে, ৬১ শতাংশ ভারতীয়ই ক্ষোভ, হতাশা, অবসাদ ও উদ্বিগ্ন বোধ করছেন।
সমীক্ষায় যে প্রশ্নগুলি করা হয়েছিল, সেগুলির উত্তর প্রায় ৮,১৪১ জন দিয়েছেন।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ রোখার ক্ষেত্রে সরকার সঠিক পথে চলছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ৪১ শতাংশ বলেছেন , হ্যাঁ। ৪৫ শতাংশ বলেছেন, না। ১৪ শতাংশ জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবেন না।
এক্ষেত্রে যে সামগ্রিক উত্তর এসেছে, তাতে ইঙ্গিত যে সরকার দ্বিতীয় ঢেউ মোকেবিলায় সঠিক পথে চলছে কিনা, সে ব্যাপারে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত অংশগ্রহণকারীরা।
করোনার দ্বিতীয় দফার এই প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ার কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে কোনও নিয়ন্ত্রণ রয়েছে কিনা, তা নিয়ে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৫০ শতাংশই অনিশ্চিত।