কলকাতা: ঝাঁ চকচকে ফ্লোরে একের পর এক সাইকেল অ্যাসম্বল করার কাজ চলছে। কথা বলা তো দুরস্ত মুখ তোলারও ফুরসত নেই। নাওয়াখাওয়ার সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যেই এবিপি আনন্দকে সময় দিলেন ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্ততকারক সংস্থা ডেক্যাথলন কর্মী সুনীল মণ্ডল। কথা বললেন সাইকেল আর সাইকেলের বেড়ে ওঠা চাহিদা নিয়ে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা বিট্যুইনয়ের সাইকেল বিক্রি করে ডেক্যাথলন। সুনীলের কথায় করোনার আগে যেখানে তাঁরা দিনে ৪-৫ টা সাইকেল বিক্রি করতেন সেখানে বিগত একমাসে প্রতিদিন অন্তত বাইশ-পঁচিশটা সাইকেল বিক্রি হয়েছে। এমনও দিন গিয়েছে যেদিন ২৯টা সাইকেল অ্যাসম্বল করতে হয়েছে। এই বাড়তি চাহিদার কারণ কী? সেক্টর ফাইভের ডেক্যাথলন স্টোরের কর্মী সুনীলের কথায়, “করোনার কারণেই দ্বিগুণ বেড়েছে সাইকেল বিক্রি। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন- হু পর্যন্ত এখন সাইকেলে যাতায়ত করার কথা বলছে।”
কী ধরনের সাইকেল বিক্রি হচ্ছে? প্রশ্ন শুনেই সুনীলের উত্তর ‘কমবেশি সব ধরনের সাইকেলই বিক্রি হচ্ছে’। মূলত বিটুইন চার রকমের সাইকেল বানায়। হাইব্রিড। মাউন্টেন। কান্ট্রি রাইড এবং রোড বাইক। এই সাইকেলগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি চাহিদা হাইব্রিডের। সুনীলের বক্তব্য, “এমটিভি মডেল তুলনামূলক রাফ অ্যান্ড টাফ। রাইডিং পসচারও অনেকটা অ্যাগ্রেসিভ। মহিলারা বিশেষ করে বয়স্কদের এই ধরনের সাইকেল চালাতে সমস্যা হয়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে হাইব্রিড অনেক আরামদায়ক।” কলকাতার রাস্তায় চড়াইউতরাই নেই সোজা পথ হওয়ায় হাইব্রিডই বেশি চলে। দামও সাধ্যের মধ্যেই। কীরকম দাম এই সাইকেলগুলোর? সুনীল জানালেন, “আমাদের এখানে ৫০০০ টাকা থেকে সাইকেল শুরু হয়, ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত আছে।” সেক্টর ফাইভের ডেক্যাথলন শোরুমে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার সাইকেলেরই বিকিকিনি বেশি। দামি সাইকেল পেশাদার ছাড়া তেমন কেউ একটা কেনেন না। মাসে হয়ত একটা কি দুটোই বিক্রি হয়।
আগামী দিনে কলকাতায় সাইকেল লেন হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে সাইকেল লেন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এতে কী শহর কলকাতার যান চলাচলের চরিত্র বদলাবে? সুনীলের জবাব, “ভুবনেশ্বর, পুনে, মহারাষ্ট্র সব জায়গাই সাইকেল লেন আছে। কলকাতায়ই শুধু নেই। তবে সেটা হলে দুটো উপকার হবে। পরিবেশ আরও সবুজ হবে এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও সুনিশ্চিত হবে।” কলকাতার রাস্তায় সাইকেল চালালে উৎসাহ দেওয়ার বদলে পুলিশ ফাইন করে। সাইকেল প্রেমীরা আশাবাদী, আলাদা লেন তৈরি হলে এই চরিত্র বদলাবে এবং করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধিও সুনিশ্চিত করা যাবে।