মুম্বই: মুম্বই উপকূল থেকে ৩৫ নটিক্যাল মাইল দূরে আরব সাগরে ডুবে যাওয়া বার্জ পি-৩০৫-এ থাকা ১৮৮ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬৩ জন নিখোঁজ। এখনও পর্যন্ত ২২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। যাঁরা কোনওক্রমে রক্ষা পেয়েছেন, তাঁরা এই উদ্ধারকার্যকে অলৌকিক ঘটনা বলেই মনে করছেন।
উদ্ধার হওয়ার পর এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ‘আমরা ৫-৬ ঘণ্টা সাঁতার কেটেছি। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। আমাদের বেঁচে ফেরা কঠিন ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত বেঁচে ফিরতে পেরেছি। উদ্ধারকারীরা আমাদের দিকে দড়ি এগিয়ে দেন। সেই দড়ি ধরে ওপরে উঠে আসি। দড়ি ধরে টানতে গিয়ে আমার আঙুল ছড়ে গিয়েছে, কিন্তু তাতেও দড়ি ছাড়িনি।’
অপর এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। আমরা সমুদ্রে ১০-১২ ঘণ্টা কোনওক্রমে ভেসেছিলাম। তারপর রাত দুটোর সময় নৌবাহিনী আমাদের উদ্ধার করে। আমরা বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভাবতেই পারিনি বেঁচে ফিরে আসব। আমাদের কীভাবে বাঁচাতে পারলেন, সেটা উদ্ধারকারীরাই বলতে পারবেন। আমরা কিছু জানি না।’
ডুবে যাওয়া বার্জটিতে অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে ছিলেন ওএনজিসি-র কর্মী সন্দীপ সিংহ। যিনি ১৬-১৮ ঘণ্টা ধরে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই চালানোর পর প্রাণ নিয়ে ফেরার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত উদ্ধার হওয়ার পর তিনি বলছেন, ‘বার্জ ডুবে যাওয়ার পর আমরা জলে পড়ে যাই। ঢেউ অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। উত্তাল সমুদ্রে বাঁচতে পরাব, এটা ভাবতেই পারিনি।’
এই উদ্ধারকার্যের বিষয়ে আইএনএস কোচির কম্যান্ডিং অফিসার সচিন সিকিউরিয়া জানিয়েছেন, ‘সাইক্লোনের সময় যে কোনও জাহাজের পক্ষেই সমুদ্রে যাওয়া চ্যালেঞ্জের। মুম্বইয়ে ঝড়ের গতি ঘণ্টায় অন্তত ১০০ কিলোমিটার ছিল। সমুদ্রের ঢেউ অন্তত ৯-১০ মিটার উঁচু হয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে শুধু সাধারণ জাহাজই না, যুদ্ধজাহাজের পক্ষেও সমুদ্রে যাওয়া যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। কিন্তু নৌসেনা আমাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আমাদের অফিসার, নাবিক সহ সবাই এই পরিস্থিতিতেও কাজ করতে তৈরি। খবর পাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে চলে যাই। তারপর শুরু হয় উদ্ধারকার্য।’
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধারকার্য ও তল্লাশি চলছে। আইএনএস কোচির পাশাপাশি আইএনএস কলকাতাও উদ্ধারকার্যে যোগ দিয়েছে। উপকূলরক্ষীবাহিনী ও নৌবাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও উদ্ধার ও তল্লাশির কাজ চলছে।