কলকাতা: প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আজ বেলা ১২.১৫ মিনিটে তিনি প্রয়াত হন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে একটি যুগের অবসান হল।


সৌমিত্রবাবুর প্রয়াণের পর তাঁর মেয়ে পৌলমী বসু বলেন, ‘আপনাদের সবার ভালবাসা, আপনাদের সবার প্রার্থনা সত্ত্বেও হয়তো উনি শেষপর্যন্ত হেরে গেলেন। কিন্তু উনি আমাদের মধ্যে চিরকাল থেকে যাবেন। ওনার আত্মা, ওনার প্রাণ আমাদের মধ্যে থাকবে। ওনার জীবনটাকে আমরা সেলিব্রেট করব। আমি সবাইকে বলছি, আপনারা দুঃখ পাবেন না, কষ্ট পাবেন না। আমরা হাসিমুখে বাবার কথা ভাবব, ওনার জীবনটাকে আদর্শ মেনে সেলিব্রেট করে চলব। আমাদের পাশে থাকার জন্য দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ধন্যবাদ জানাই। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।’

পৌলমী আরও জানান, ‘হাসপাতাল থেকে বাবার দেহ নিয়ে প্রথমে গল্ফ গ্রিনের বাড়িতে যাব। সেখানে বেশিক্ষণ থাকব না। সেখান থেকে টেকনিশিয়ানস স্টুডিও হয়ে আমরা সাড়ে তিনটের মধ্যে রবীন্দ্র সদনে পৌঁছব। রবীন্দ্র সদনে ওনাকে ২ ঘণ্টা রাখা হবে। তারপর রবীন্দ্র সদন থেকে পদযাত্রা করে আমরা ওনাকে কেওড়াতলা শ্মশানে নিয়ে যাব।’

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সৌমিত্রবাবুর জন্ম নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। বাবা মোহিতকুমার চট্টোপাধ্যায় পেশায় আইনজীবী হলেও ভালবাসতেন আবৃত্তি, নাটক, গান । বাবার আবৃত্তি শুনেই কবিতার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ছেলের। সৌমিত্রবাবুর ছেলেবেলা কেটেছে কৃষ্ণনগর, হাওড়া ও কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। পেশাগত জীবন শুরু অল ইন্ডিয়া রেডিও-র ঘোষক হিসেবে। মঞ্চে হাতেখড়ি কলেজ জীবনে। ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে রুপোলি পর্দায় অভিনয় শুরু। পরবর্তীকালে মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, ঝিন্দের বন্দি, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, চারুলতা, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, শাখা-প্রশাখা, গণশত্রু, কোনি প্রভৃতি।

অভিনয় ছাড়া নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। পর্দা থেকে মঞ্চ, কবিতা থেকে পত্রিকা সম্পাদনা, এমন অজস্র সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন কিংবদন্তী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।