নয়াদিল্লি: কংগ্রেস সাংসদ মণীষ তিওয়ারির একটি ট্যুইট ঘিরে সংসদের আসন সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি একটি ট্যুইটে বলেন, ২০২৪-এর ভোটের আগেই লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ১০০০ বা তার বেশি করতে পারে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। তিওয়ারি দাবি করেন, কয়েকজন বিজেপি নেতার সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় এ কথা জানতে পেরেছেন তিনি। উল্লেখ্য, এর আগে  বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ লোকসভার আসন সংখ্যা বর্তমানের ৫৪৫ থেকে বাড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন।এখন প্রশ্ন হল, সরকার কি লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়বে? এর উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে তা কবে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যেতের হাতেই রয়েছে। এখন দেখে নেওয়া যাক, লোকসভা কেন্দ্র ও তার সীমায় কীভাবে বদল করা যায়। 


এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে সংবিধানের ৮১ ধারায়-


এই ধারা অনুসারে লোকসভার মোট সদস্য সংখ্যা সর্বাধিক ৫৪৫ হতে পারে। ২০২৬ পর্যন্ত এতে কোনও বদল হবে না। ২০২৬-এর পর ২০২১-এর জনগণনার ভিত্তিতে বদল করা যেতে পারে। 


 কয়েকবার বেড়েছে লোকসভার আসন সংখ্যা


বর্তমানে লোকসভার সদস্য সংখ্যা ৫৪৫। কিন্তু প্রথম থেকেই কি এই সংখ্যা ছিল?প্রথম থেকেই কি স্থির করা হয়েছিল যে, ২০২৬-এর পরই তা বদলানো যেতে পারে? এই সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর সংবিধান সংশোধন। ১৯৫২-তে প্রথম লোকসভা নির্বাচনের সময় লোকসভার আসন সংখ্যা ছিল ৪৮৯। সংবিধানের ৮১ ধারা অনুসারে, জনসংখ্যার তারতম্যের প্রতিফলন লোকসভার সদস্য সংখ্যায় থাকবে। ওই ধারা ২-৩ বার সংশোধন হয়েছিল। শেষবার সংশোধন হয়েছিল ১৯৭৩-এ। তখন সংবিধানের ২১ তম সংশোধনের মাধ্যমে  ১৯৭১-এর জনগণনা অনুসারে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির হয়েছিল। লোকসভার আসন সংখ্যা ৫০২ থেকে বাড়িয়ে ৫৪৫ করা হয়েছিল। 
সংবিধানের ওই ধারা অনুসারে, জনসংখ্যা ও আসনের অনুপাত সমস্ত রাজ্যের ক্ষেত্রে একই হতে হবে। 


লোকসভায় আসন সংখ্যা বাড়াতে প্রয়োজন ৮১ (৩) ধারায় সংশোধন


এ বিষয়ে ৮১ (৩) ধারার প্রসঙ্গ খুবই উল্লেখযোগ্য। এই ধারা অনুসারে, লোকসভার আসন সংখ্যা ২০২৬-র পর পরিবর্তন করা যেতে পারে। আসলে এই ধারা বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭৬-এ ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ঠিক হয়েছিল যে, লোকসভার আসন সংখ্যা স্থির করার ভিত্তি ১৯৭১-এর জনগণনা হবে এবং তা ২০০১ পর্যন্ত বহাল থাকবে। আশা ছিল যে, ২০০১ সালের পর লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু ২০০৩-এ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে সংসদ। 


সংবিধানের ৮৪ তম সংশোধনের মাধ্যমে স্থির হয়েছিল যে, লোকসভার আসন সংখ্যা নির্ধারনের ভিত্তি ১৯৭১-এর জনগণনাই থাকবে। সেইসঙ্গে এই সংখ্যা ২০২৬ পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর কারণ ছিল, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সফল দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি আসন পুণর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে অসুবিধার মুখে পড়বে। কারণ, ওই রাজ্যগুলির আসন সংখ্যা কমে যাবে। এজন্য ২০ বছর অপেক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য আসে। এরইমধ্যে ২০০২-এর জুলাইতে লোকসভা আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের কাজ শুরু হয়েছিল। তা শেষ হয় ২০০৮-এর ৩১ মে। ২০০১-র জনগণনার ভিত্তিতে এই ডিলিমিটেশন হয়েছিল। এক্ষেত্রে শুধু আসনগুলির সীমানার পুণর্বিন্যাসই হয়েছিল। 


কিন্তু এখনও পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারসাম্য এখনও অধরাই। কিন্তু এটা ঠিক যে, লোকসভার আসন সংখ্যা নির্ধারনের ভিত্তি চিরদিন ১৯৭১-এর জনগণনাকে ধরা যায় না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যদি লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়াতে চায় তাহলে সবার আগে সংবিধানের ৮১ (৩) ধারা সংশোধন করতে হবে। সংসদের উভয় কক্ষের মোট সদস্য সংখ্যার সাধারণ সংখ্যগরিষ্ঠতা ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে এই সংশোধনী পাস করা যায়। অর্থাৎ, সংসদের উভয় কক্ষই চাইলে আসন সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ২০২৬ পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন হবে না। 


গঠন করতে হবে ডিলিমিটেশন কমিশন


লোকসভার আসন সংখ্যা নির্ধারনের ভিত্তি জনগণনা বর্ষ বদলের পর সরকারকে একটি ডিলিমিটেশন কমিশন গঠন করতে হবে। ২০০২-এর ডিলিমিটেশন আইন অনুসারে এই কমিশনের প্রধান হতে পারেন সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান বা প্রাক্তন কোনও বিচারপতি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার বা তাঁর মনোনীত নির্বাচন আধিকারিকও এর সদস্য হন। ডিলিমিটেশন কমিশন বিস্তৃত পর্যালোচনার পর দুটি বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করবে- লোকসভার সসদ্য সংখ্যা কত হবে এবং রাজ্যওয়াড়ি আসন সংখ্যা কী হবে?
কমিশনের সুপারিশের পর এই রিপোর্ট অনুসারে সরকারকে সংসদে ফের একটি সংবিধান সংশোধনী বিল আনতে হবে। ধারা ৮১ (১)-এর সংশোধন করতে হবে, যাতে লোকসভার আসন সংখ্যা বাড়ান যায়। এরপর ডিলিমিটেশন আইনের ধারা অনুয়ায়ী, রাজ্যওয়াড়ি আসনের পুণর্বন্টন ঘটানো যেতে পারে।