নয়াদিল্লি: নির্বাচনী প্রচার-পর্বের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতের মহাকাশ গবেষণায় বিরাট সাফল্য ঘোষণায় মডেল নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙা হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করল নির্বাচন কমিশন। বুধবার কমিশনের এক মুখপাত্র এই খবর জানিয়েছেন। এর আগে নির্বাচন কমিশন জানায়, জাতীয় সুরক্ষা ও দেশের সামনে বিপদ, বিপর্যয় মোকাবিলা পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়গুলি মডেল আচরণবিধির আওতায় পড়ে না। তবে শেষপর্যন্ত তদন্ত কমিটি গঠন করা হল।


বিরোধী শিবিরের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই ওই ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ মিশন শক্তি মহাকাশ কর্মসূচির সাফল্য ঘোষণা করে জানান, স্যাটেলাইট বিধ্বংসী মিসাইলের ক্ষমতা সফলভাবে দেখিয়েছে ভারত, একটি তাজা উপগ্রহ ধ্বংস করে অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইলের শক্তি প্রমাণ করেছে। এটা বিরল কৃতিত্ব, এতে ভারত মহাকাশ দুনিয়ার শক্তিধর দেশগুলির তালিকায় উঠেছে। এই শক্তি অর্জিত হওয়ায় শত্রু, প্রতিপক্ষ দেশের যে কোনও উপগ্রহ ধ্বংস করতে পারবে ভারত।

কমিশনের এক প্রতিনিধি বলেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি বৈঠকে বসেছিল। সেখানে গৃহীত সিদ্ধান্ত, দেশের সুরক্ষা ও বিপর্যয় মোকাবিলা পরিচালনার মতো ইস্যু মডেল আচরণবিধির আওতায় পড়ে না, এগুলি ঘোষণার জন্য আগাম সম্মতিরও প্রয়োজন হয় না।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মোদির ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেন আজ। মমতা প্রতিরক্ষা গবেষণা উন্নয়ন সংস্থাকে অভিনন্দন জানিয়েও মোদির সমালোচনা করেন এই বলে যে, তিনি নাটকবাজি করছেন, প্রচারলোভী। ভারতের মহাকাশ কর্মসূচি অনেক বছর ধরেই বিশ্বমানের। সর্বদা আমাদের ডিআরডিও, অন্য গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীদের নিয়ে আমরা গর্ব করি।




ইয়েচুরি নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে প্রশ্ন করেছেন, কী করে সাধারণ নির্বাচন পর্বের মধ্যেই ভারতের বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বে ‘রাজনৈচিক রং’ দেওয়ার অনুমতি পেলেন মোদি। ইয়েচুরি এ-স্যাট নামক উপগ্রহ ধ্বংসকারী অস্ত্র তৈরির জন্য বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করে বলেন, ভারতের যে এই শক্তি আছে, সেটা ২০১২-য় তত্কালীন ডিআরডিও প্রধানই জানিয়েছিলেন। এ ধরনের কর্মসূচি সাধারণত বিশ্ব ও দেশবাসীর সামনে ঘোষণা করে ডিআরডিও-র মতো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরিবর্তে দেশবাসীর সামনে ভাষণ দিয়ে এই ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী। এবং চলতি নির্বাচনী প্রচার পর্বের মধ্যেই এই ঘোষণা করলেন যিনি, তিনি নিজেই ভোটের প্রার্থী। এটা মডেল নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের পরিষ্কার উদাহরণ। কমিশন কি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ব্যাপারে আগে জানত? কমিশন কি দেশের মানুষকে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের ভাষণে সম্মতি দিয়েছিল? আমি নিশ্চিত, গোটা দেশ জানতে চাইবে কী বিশেষ কারণে নির্বাচন কমিশন সাধারণ নির্বাচন পর্বের মধ্যেই ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সাফল্য, কৃতিত্বে রাজনৈতিক রং দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।