কান্নুর (কেরল): জীবন গিয়েছে চলে.. ৭২ বছর পার। এতগুলো বছর সময়ের স্রোতে জীবন থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। ৭২ বছর পর আবার দেখা।  প্রায় সাত দশক পর একে অপরের মুখটাও তেমন ভালো করে মনে নেই। একে অপরের পাশে বসে ভাষা হারিয়ে ফেলেন তাঁরা।বয়সের ভারে কুঁচকে যাওয়া গাল বেয়ে নামল অশ্রুধারা।


একজন ১৯৪৬-এর হিংসাশ্রয়ী কৃষক আন্দোলনে যোগ গিয়ে জেলে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ৯৩ বছরের ইকে নারায়নন নাম্বিয়ার। অন্যজন সারদা। সেদিনের সেই কিশোরী এখন ৮৯।

চোখে দল নিয়ে মুখোমুখি দুইজন। স্মৃতিতে তখন বোধহয়  সাত দশক আগের ফেলে আসা দিনগুলি। সারদা তখন ১৩ বছরের কিশোরী, আর নারায়নন ১৭-র টগবগে তরুণ। বিয়ে হয়েছিল দুজনের। কিন্তু সুখের দিনগুলো স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। বিয়ের ১০ মাস পরেই বাবা থালিয়ান নাম্বিয়ারের সঙ্গে গা-ঢাকা দিতে হয়েছিল নারায়ননকে। তাঁর বাবা ছিলেন কাভুয়াম্বায়ি আন্দোলনের নেতা।

ওদিকে  বাড়িতে তখন নারায়নন ও তাঁর বাবার খোঁজে মালাবার স্পেশ্যাল পুলিশের সময়ে অসময়ে হানাদারি।এজন্য নব বধূকে পাঠিয়ে দেওয়া হল বাবার বাড়িতে।

নারায়ননের ভাইপো মাধু কুমার জানালেন, ওঁদের বাড়িটা ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কয়েক মাস ধরে ধরা পড়েন বাবা-ছেলে দুজনেই। পরে তাঁদের আট বছরের জেল হয়।

কয়েক যুগ পর ফের দেখা।   স্মৃতির পরত খুলতে খুলতে নীরবতা ভেঙে নারায়ননকে কান্না ভেজা গলায় সারদা বললেন, কারুর ওপর রাগ নেই আমার।

তাহলে, চুপ করে বসে আছ কেন? কিছু বলছ না কেন?, সম্বিত ফিরে প্রশ্ন করেন নারায়নন।

মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে বসে সারদা।

কান্নুর, বিয়ুর ও সালেম জেলে সাজার মেয়াদ কাটান নারায়নন।  জেলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁর বাবা। সেই কৃষক আন্দোলনের নেতা নারায়ননের শরীরে বিঁধেছিল ২২ টি শেল। যেগুলির মধ্যে তিনটি বের করা যায়নি।

ইতিমধ্যে সারদার বাড়ির লোকজন অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন।

১৯৫৭ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নারায়ননও ফের বিয়ে করেন।

কিছুদিন আগে সারদার ছেলে ভার্গবনের সঙ্গে নারায়ননের আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাত্ হয়।  কথায় কথায় দুই পরিবারের যোগসূত্র বেরিয়ে আসে। তখন তাঁরা দীর্ঘদিন আগে বিচ্ছিন্ন দম্পতিকে ফের মুখোমুখি করার সিদ্ধান্ত নেন।

নারায়ননের দ্বিতীয় স্ত্রী কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। সারদাও দ্বিতীয় স্বামীকে হারিয়েছেন ৩০ বছর আগে।

ভার্গবনের বাড়িতেই দুই বিচ্ছিন্ন দম্পতির সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। অশক্ত পায়েই নারায়নন সারদার সঙ্গে দেখা করতে ভার্গবনের বাড়িতে আসেন। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন আত্মীয়।

ভার্গবন জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁর মা বেরিয়ে এসে নারায়ননের সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলেন না। অনেক অনুরোধ-উপরোধের পর রাজি হন তিনি।

মুখোমুখি বসে সঙ্কোচ কাটাতে পারছিলেন না দুজনেই। চোখে জল নামে দুজনেরই।

ভার্গবন জানিয়েছেন, দুজনেই প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছিলেন।

সাক্ষাত্ শেষে ভার্গবনের পরিবারের মধ্যাহ্নভোজেরও আয়োজন করেছিল। দুই পরিবারই ফের দেখা-সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সারদার ছয় সন্তানের মধ্যে এখন মাত্র চারজন জীবীত রয়েছেন।

নারায়ননের নাতনি শান্তা কাভুয়াম্বায়ি লিখেছেন কাভুয়াম্বায়ি কৃষক আন্দোলনের ইতিহাস। নাম-জিসেম্বর ৩০।

১৯৪৬-এর ডিসেম্বরে নিজেদের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেই আন্দোলন ভাঙতে পাঠানো হয় পুলিশ। আন্দোলনকারীরা পুলিশ বাহিনীকে বাধা দিলে চলে গুলি। পাঁচ জন কৃষক প্রাণ হারিয়েছিলেন গুলিতে।