নয়াদিল্লি: ‘কংগ্রেসের অনেক সদস্যই মনে করেন ২০০৪ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী হলে পার্টিকে ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ওভাবে শোচনীয় পরাজয়ের মুখে পড়তে হত না। কংগ্রেসের অনেকের ভাবনার সঙ্গে একমত না হলেও এটা নিশ্চিত, আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত হওয়ার পরই আমাদের দল রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়েছিল। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় সামলাতে পারছিলেন না সনিয়া গাঁধী। আর ডক্টর (মনমোহন) সিংহের দীর্ঘ অনুপস্থিতি তৈরি করেছিল বড় একটা ব্যবধান। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দলের সাংসদদেরই সেভাবে কোনও যোগাযোগ ছিল না।’ ঠিক এই ভাষাতেই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ ও হতাশা উগরে দিয়েছিলেন প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।


আগামী জানুয়ারি মাসে প্রকাশ পেতে চলেছে তাঁর লেখা শেষ বই ‘দ্য মেমোয়্যার, দ্য প্রেসিডেনশিয়ান ইয়ারস’ বইয়ের শেষ খণ্ড। যে বই আখেরে প্রণববাবুর আত্মজীবনীর শেষ খন্ড। যেখানে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করে প্রণব মুখোপাধ্যায় সরাসরি নিশানা করেছেন সনিয়া গাঁধী, মনমোহন সিংহকে। তেমনটাই জানা গিয়েছে প্রকাশনী সংস্থা সূত্রে।

দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণববাবু প্রয়াত হয়েছেন গত অগাস্ট মাসে। দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক হওয়ার আগে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কংগ্রেসের অন্যতম পরিচিত সর্বভারতীয় নেতা ছিলেন এই বঙ্গসন্তান। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় প্রতিবারই কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদ সামলেছিলেন প্রণববাবু। দক্ষ মন্ত্রীর সঙ্গেই দলে ও জোটে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’, ‘চাণক্য’-র মতো একাধিক তকমাতেই ভূষিত করা হত তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে।

ভারত যে সব যোগ্য প্রধানমন্ত্রীকে পায়নি, তাদের তালিকায় সবার উপরে রাখা হয় প্রণববাবুকে। ২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই মনে করেছিলেন দেশের প্রথম বাঙালি প্রধানমন্ত্রী পাওয়া যাবে। কিন্তু তেমনটা হয়নি সনিয়া গাঁধীর সিদ্ধান্তে। ২০১৭ সালে প্রণববাবুর বইয়ের প্রথম সংস্করণ প্রকাশের সময় তাই মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, ‘ওঁর মনক্ষুণ্ণ হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ ছিল। তবে গোটা বিষয়টা কোনওদিন প্রভাব ফেলেনি আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে।’

ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহের তীব্র সমালোচনা করে প্রণববাবু তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘মনে করি সরকারচ্যুত হওয়ার দায় নৈতিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর বর্তায়। প্রশাসনিক কাজকর্মের থেকেও জোটধর্ম রক্ষার দায়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন উনি। যা সরকার পরিচালনায় প্রভাব ফেলেছিল। উল্টোদিকে মোদি অনেকটাই স্বৈরতান্ত্রিক সুলভ সরকার পরিচালনা করেছেন। যা সরকারের সঙ্গে আইনসভা, বিচারব্যবস্থার সম্পর্ক খারাপ করেছে। সময়ই একমাত্র উত্তর দিতে পারবে ভবিষ্যতে যে ধারা বদলাবে কি না।’

এমনিতেই একের পর এক বর্ষীয়ান নেতার প্রকাশ্যে ক্ষোভপ্রকাশ, জনসমক্ষে চলে আসা গোষ্টীদ্বন্দ্বের মতো ইস্যুতে ক্রমাগত দীর্ণ কংগ্রেস। এবার আত্মজীবনীর শেষখন্ডে শীর্ষ নেতৃত্বের নেতৃত্বহীনতা নিয়ে প্রণববাবুর আক্রমণ কিছুদিনের মধ্যেই জনসমক্ষে আসার পর কংগ্রেসের আরও রক্তক্ষরণই অপেক্ষা করছে, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।