নয়াদিল্লি: কংগ্রেসের বিরোধিতার মধ্যেই শুক্রবার লোকসভায় মু্সলিম মহিলা (বিবাহ সংক্রান্ত অধিকার রক্ষা) বা তিন তালাক বিল পেশ করল কেন্দ্রের সরকার। এটি নতুন বিল। কংগ্রেসের তরফে শশী তারুর প্রথম এই বিলের ধারা নিয়ে আপত্তি তোলেন। অন্য বিরোধীদেরও একই সুর ছিল। এই বিলে মহিলাদের ‘ক্ষমতায়ন হবে না’ বলেও সওয়াল করে কংগ্রেস। পাশাপাশি এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বিলটিকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দেন। বিরোধীরা বিলে শাস্তি দেওয়ার বিধিতে আপত্তি তুলেছে।
যদিও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বিরোধীদের আপত্তি খারিজ করে বলেন, আইন তৈরি করাই সংসদের কাজ। আইনের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণের ব্যাপারটা আদালতের ওপরই ছেড়ে দেওয়া ভাল।
গত ১২ জুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মুসলিম মহিলা (বিবাহ অধিকার রক্ষা) বিল, ২০১৯ অনুমোদন করে। সেটি সংসদের বর্তমান অধিবেশনে পেশ হওয়ার রাস্তা পরিষ্কার হয় এতে। মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এটিই প্রথম সংসদে পেশ করা প্রথম বিল।
তিন তালাক প্রথাটিকে বাতিল করা মোদি সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। বিলটি পাশ হলেই তাত্ক্ষনিক তিন তালাকের মাধ্যমে স্ত্রীকে মুসলিম পুরুষের ডিভোর্স দেওয়া বন্ধ হবে বলে দাবি সরকারের। তিন তালাক দেওয়া ধর্তব্যযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাবও রয়েছে বিলে। সহমত গড়তে সরকার পক্ষ ১৭-তম লোকসভার প্রথম অধিবেশনের এজেন্ডা স্থির করতে ১৯ জুন বিরোধীদের বৈঠকে ডেকেছিল।
বিরোধীরা বিলের সামগ্রিক বিরোধিতা না করলেও তার কিছু ধারায় আপত্তি করেছে। বিলে তিন তালাক দেওয়া মুসলিম পুরুষের তিন বছর কারাবাসের প্রস্তাব রয়েছে। বলা হয়েছে, অভিযুক্ত বিচার শুরুর আগে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে জামিন পেতে পারেন একমাত্র স্ত্রী সম্মতি দিলেই। কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধীরা কারাবাসের বিধিতে আপত্তি তুলেছে, স্বামী পরিত্যক্ত স্ত্রী ও তার সন্তানদের সরকার থেকে ক্ষতিপূরণের সংস্থান রাখার দাবিও করেছে। প্রস্তাবিত আইনানুসারে, স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব মুসলিম স্বামীরই। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, বিলটি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।
বিলটি লিঙ্গ সমতা, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য বলে দাবি করেন প্রসাদ। এদিন ভোটাভুটিতে ১৮৬ জনের সমর্থন পায় বিলটি। ৭৪ জন বিরোধিতা করেন। প্রসাদ বলেন, এটা ধর্ম নয়, মহিলাদের ন্যায়ের প্রশ্ন।
বিলটি পেশ করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, দেশে ৫৪৩টি তালাক দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। তিন তালাক প্রথা সু্প্রিম কোর্ট নিষিদ্ধ করার পরও ২০০টির বেশি তালাক দেওয়ার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। এটা মহিলাদের মর্যাদা রক্ষার প্রশ্ন, আমরা তা রক্ষায় দায়বদ্ধ।
ওয়েইসি বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন, মুসলিম মহিলাদের জন্য ওদের দরদ উথলে পড়ছে, কিন্তু কেরলে শবরীমালা মন্দিরে হিন্দু মহিলাদের ঢুকতে দেওয়ায় সায় নেই! তিনি এও বলেন, তিন তালাক বিলটি সংবিধানে দেওয়ার অধিকার লঙ্ঘন করে, কেননা তিন তালাক দেওয়ায় দোষী মুসলিম পুরুষের যেখানে তিন বছরের কারাবাস হব, সেখানে অ-মুসলিম পুরুষের একই অপরাধে মাত্র এক বছর জেল হবে।