শ্রীনগর: জঙ্গিদমন অভিযানে বড় সাফল্য পেল নিরাপত্তাবাহিনী। বুধবার পুলওয়ামা জেলার অবন্তিপোরায় এক অভিযান চালিয়ে হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান রিয়াজ নাইকুকে সম্ভবত খতম করেছে বাহিনী। তবে খতম হয়েছে তার দুই বডিগার্ডও। পুলওয়ামার শার পাম্পোরে আরেকটি অভিযানে অন্য দুই জঙ্গিকে খতম হয়েছে।


সেনা সূত্রে খবর, গতকাল রাতে গোপন গোয়েন্দা তথ্য আসে যে হিজবুলের শীর্ষ কমান্ডার বেঘপোরা গ্রামে তার বাড়িতে এসেছে। তার সঙ্গে রয়েছে আরও এক জঙ্গি, যে তার বডিগার্ড। সময় নষ্ট না করেই অভিযানে নামে যৌথবাহিনী। ঘিরে ফেলা হয় গোটা গ্রাম। ঢোকার ও বেরোনোর সমস্ত রাস্তা সিল করে দেওয়া হয়। অভিযানে অংশ নেয় ৫৫ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস, সিআরপিএফ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন্স গ্রুপ (এসওজি)।


পাশাপাশি, পাশের গুলজারপোরা গ্রামকেও ঘিরে ফেলা হয়। এরপর, এই এলাকাজুড়ে চিরুনি-তল্লাশি অভিযান শুরু করে বাহিনী। লক্ষ্য ছিল, কোনওমতে, ওই জঙ্গিনেতা যাতে পালাতে না পারে। রিয়াজের বাড়ির কাছে বাহিনী পৌঁছতেই জঙ্গিরা তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলিবর্ষণ শুরু করে। পাল্টা জবাব দেয় বাহিনীও। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুপক্ষের গুলি বিনিময়ের পর রিয়াজের বডিগার্ড সেখানেই খতম হয়।


সেনা সূত্রে খবর, আরও কয়েক ঘণ্টা পর, বাহিনী নিশ্চিত হয় যে রিয়াজকে নিরস্ত্র করা সম্ভব হয়েছে। পরে সেনা সূত্রে জানা যায়, রিয়াজ খতম হয়েছে। তার দেহ বাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে তার বডিগার্ডের দেহ-ও। এদিকে, এনকাউন্টারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই, নিরাপত্তাজনিত কারণে, কাশ্মীরে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।


২০১৬ সালে ৮ জুলাই অনন্তনাগ জেলার কোকরনাগে হিজবুলের পোস্টার বয় বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর জঙ্গিগোষ্ঠীর কমান্ডার নিযুক্ত হয় রিয়াজ। রিয়াজের মাথার ওপর ১২ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা হয়। জঙ্গিগোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার আগে, স্থানীয় একটি স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক ছিল রিয়াজ। গোলাপ আঁকায় সে পারদর্শী ছিল। ৩৩ বছর বয়সে সে হিজবুলের খাতায় নাম লেখায়।


রিয়াজের ধরা পড়া বা খতম হওয়া, বাহিনীর কাছে বড় সাফল্য। কারণ, এর ফলে, জম্মু ও কাশ্মীরের জঙ্গিগোষ্ঠীদের কাছে এই খবর বড় ধাক্কা হবে। বাহিনী সূত্রে খবর, সংগঠন থেকে জাকির মুসা বেরিয়ে যাওয়ার পর হিজবুলকে ফের একত্রিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। ২০১৭ সালে মুসা হিজবুল থেকে বেরিয়ে আনসর ঘাজোয়াতুল হিন্দ নামে নিজের সংগঠন খোলে। নিজের সংগঠনকে সে আল কায়দার ভারতীয় অঙ্গ হিসেবে মেলে ধরেছিল মুসা। ২০১৯ সালের ২৩ মে ত্রালের দাদসরা অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে খতম হয় মুসা।


অবন্তীপোরায় অন্য একটি অভিযানে এদিন খ্রু পাম্পোরের শার্সালিতে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে খতম হয়েছে আরও ২ জঙ্গি। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, ভোরে এক জঙ্গি খতম হয়। তার কয়েক ঘণ্টা পর খতম হয় আরেক জঙ্গি। নিহতদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই নিয়ে উপত্যকায় গত তিন দিনে তিনটি এনকাউরন্টার হল।