নয়াদিল্লি: উদযাপিত হচ্ছে দেশের ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবস । করোনা আবহে এবারের অনুষ্ঠান নিঃসন্দেহে আলাদা। লালকেল্লা থেকে সপ্তম বারের জন্য জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।


কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার সহ অতিথিদের জন্য অন্যান্য বছর ৮০০টি আসন নির্দিষ্ট থাকে। এবার সেই জায়গায় ১০০ থেকে ১২৫ জন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

অন্যান্য বছর ৪ হাজার ২০০ জন শিশুও উপস্থিত থাকে অনুষ্ঠানস্থলে। এবার তা না হয়নি। সেক্ষেত্রে ৫০০ জন এনসিসি ক্যাডেট উপস্থিত আছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ' যে স্বাধীন ভারতে আজ আমরা নিঃশ্বাস নিচ্ছি, তার পিছনে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর লড়াই আছে, জীবনদান আছে। সেই স্বাধীনতাসংগ্রামী ও শহিদদের প্রণাম জানাই। দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সবাইকে প্রণাম।’

করোনা আবহে কেন্দ্র-রাজ্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তাঁর স্বাধীনতা-দিবসের বক্তব্যে উঠে আসে 'আত্মনির্ভর ভারত' গড়ে তোলার কথা।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য একনজরে -

- দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সবাইকে প্রণাম। শ্রী অরবিন্দর জন্মজয়ন্তীতে তাঁকেও স্মরণ করছি।

- পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে করোনা সবাইকে আটকাচ্ছে। অন্য বারের মতো এবার ছোট বাচ্চাদের সামনে দেখছি না।

- অনেকে করোনা-সঙ্কটে প্রভাবিত হয়েছেন। অনেক পরিবার তাদের স্বজনদের হারিয়েছে।
সেই সব পরিবারের প্রতি রইল আমার সমবেদনা। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ঘটেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

- এইসব বিপর্যয়ের মোকাবিলায় রাজ্যের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে আছে কেন্দ্রও। আজ নতুন সংকল্প নেওয়া, নতুন প্রেরণা অর্জনের দিন।

- আগামী বার স্বাধীনতার ৭৫ বছর। আগামী ২ বছর বড় সঙ্কল্প নেওয়ার দিন।

- সময় এসেছে ১৩০ কোটি দেশবাসীর আত্মনির্ভর হওয়ার সংকল্প নেওয়ার। আজ দেশবাসীর কাছে আত্মনির্ভরতা এক মন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের পায়ে ভারতকে দাঁড়াতেই হবে।

- দেশের নাগরিকদের প্রতিভা নিয়ে আমি গর্বিত। আত্মনির্ভরতার জন্য উপযুক্ত হতে হবে আমাদের। তার জন্য প্রয়োজন ভরপুর আত্মবিশ্বাস।

- কাঁচামাল ও কৃষির দাম বহির্বিশ্বে বাড়াতে হবে। শুধু আমদানি কমালেই হবে না। নিজেদের সৃজনশীলতা বাড়াতে হবে। করোনা সঙ্কটকালে দুনিয়া যা দিতে পারেনি, ভারত তা তৈরি করেছে।

- করোনাকালে এন ৯৫ মাস্ক, পিপিই ভারত নিজেই তৈরি করেছে। স্থানীয় উত্পাদনের গৌরব প্রচার করতে হবে।

-এখন থেকে প্রত্যেকের থাকবে হেলথ-আইডি। এই আইডি-তে থাকবে তার রোগ সম্পর্কিত সব তথ্য। কোন চিকিত্সককে দেখিয়েছেন, পরীক্ষার রিপোর্ট কী, সবকিছু। লাল কেল্লা থেকে বড় ঘোষণা মোদির।

- গরিবদের জনধন অ্যাকাউন্টে লাখ টাকা আসবে, কে ভেবেছিলেন? অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন উঠে যাবে, কে ভেবেছিলেন? এক দেশ এক কর, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের মতো পরিবর্তন দেখছে দুনিয়া।

- গত বছর প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে রেকর্ড গড়েছে ভারত। এফডিআই বেড়েছে ১৮ শতাংশ। করোনা-কালেও ভারতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে শিল্প সংস্থাগুলি। দেশে পরিকাঠামো উন্নয়নে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা।

-সীমান্ত ও উপকূলবর্তী এলাকার জেলাগুলিতে এনসিসি-র ১ লক্ষ ক্যাডেট নিয়োগ করা হবে। এঁদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ জায়গা তরুণীদের। এঁদের প্রশিক্ষিত করবে সেনা, নৌ সেনা ও বায়ুসেনা

- ভারত কী পারে, তা লাদাখে দেখেছে বিশ্ব। লওসি থেকে এলএসি, ভারতের দিকে যে চোখ তুলেছে, সে পেয়েছে যথোপযুক্ত জবাব।

-মেয়েদের সঠিক বিয়ের বয়স কী? ন্যুনতম বয়স পুনর্বিবেচনার জন্য জন্য আমরা কমিটি গঠন করেছি। কমিটি রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আমরা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

-আন্দামানের পর আগামী ১ হাজার দিনের মধ্যে সুপারফাস্ট ইন্টারনেট পাবে লাক্ষাদ্বীপ

- আত্মনির্ভর, আধুনিক সম্বৃদ্ধ ভারত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এজন্য আমরা তিন দশক পর নয়া শিক্ষানীতি এনেছি এবং সারা দেশজুড়ে সেই নীতি স্বাগত জানানো হয়েছে, যা নয়া আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার করেছে।

- তিনটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। সবচেয়ে কম দামে কীভাবে ওই ভ্যাকসিন সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, তাও চূড়ান্ত। তিনটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা আছে আলাদা আলাদা স্তরে। সবুজ সঙ্কেত পাওয়া মাত্রই গণউত্পাদনের জন্য প্রস্তুত ভারত।

-২০১৪-র আগে হাতে গোনা কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত অপলিক্যাল ফাইবারের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। গত পাঁচ বছরে দেড় লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতকে অপটিক্যাল ফাইবারের সঙ্গে সংযু্ক্ত করা হয়েছে। আগামী ১০০০ দিনে দেশের প্রত্যেক গ্রাম অপটিক্যাল ফাইবারের সঙ্গে যুক্ত হবে।

- আমাদের দেশের মহিলারা যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই দেশকে করেছেন গর্বিত। দেশের হাত মজবুদ করেছে। কেন্দ্র মহিলাদের নিয়োগ ও স্বনিযুক্তিতে সমানাধিকার দেবে। আজ মহিলারা একদিকে কয়লা খনিতে কাজ করছেন, অন্যদিকে যুদ্ধবিমানে আকাশ স্পর্শ করছেন।

- কৃষি ক্ষেত্রে একের পর এক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিকল্প পথে কৃষি থেকে আয় বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১ লক্ষ কোটি টাকা কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে। গ্রামীণ শিল্পকে উন্নত করতে, আর্থিক ক্লাস্টার গড়া হবে।