নয়াদিল্লি: নাম না করেই পাকিস্তানকে স্পষ্ট নিশানা বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের। ভারত এক পড়শী দেশের অভিনব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। প্রতিবেশী দেশটির স্বাভাবিক আচরণ করা ও সীমান্ত পেরনো সন্ত্রাসবাদ দমনে পদক্ষেপ করা উচিত বলেও অভিমত জানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিদেশমন্ত্রী হিসাবে ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেছেন, আমরা আশা করি, ভারতের আশপাশের এলাকা আরও শক্তিশালী, স্থিতিশীল হবে। তবে একটি প্রতিবেশী দেশ যে চ্যালেঞ্জ, সেটা মানছি। সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ সমস্যা যতদিন না মিটছে, ওরা স্বাভাবিক প্রতিবেশীর মতো ব্যবহার করছে, ততদিন চ্যালেঞ্জ বহাল থাকবে।
নিজের মন্ত্রকের গত ১০০ দিনের কাজকর্মের খতিয়ান পেশ করে তিনি বলেন, সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, ৩৭০ অনুচ্ছেদের আওতায় জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের মতো ইস্যুতে ভারতের বক্তব্য, অবস্থান গোটা দুনিয়ার কাছে তুলে ধরা হয়েছে, ভারতের কথা এখন বাকি বিশ্ব বেশি শুনছে। জয়শঙ্করের কথায়, আমাদের ক্ষমতা, বৈদেশিক এজেন্ডা নির্ধারণ, তাকে আকার দেওয়ার বাসনা আগের চেয়ে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি, জি-২০, ব্রিকস-এর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের মতামত এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি শোনা হচ্ছে।
গত আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার ও এই ইস্যুতে পাকিস্তানের মাথা গলানো সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জয়শঙ্কর বলেন, একটা সীমার পর এ নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যেরা কাশ্মীর নিয়ে কী বলছে, তা নিয়ে মাথাব্যাথা না করাই ভাল। ১৯৭২ সাল থেকে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, তা বদলাচ্ছে না। কারণ দিনের শেষে ইস্যুটা আমার নিজের। এই ইস্যুতে আমাদের অবস্থান বহাল থেকেছে, থাকবেও।
তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের ভারতের অংশ এবং একদিন ভারত সেখানকার ভৌগলিক কর্তৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ কায়েম করবে বলে আশাবাদী।
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, এবার থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হবে কাশ্মীর নয়, শুধুমাত্র পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই। পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে শোরগোল তোলার চেষ্টা করায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, দুজনেই বিবৃতি দিয়ে এই অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সেই সুরেই জয়শঙ্কর বলেছেন, পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ভারতের অবস্থান বরাবর খুব স্পষ্ট, তা-ই থাকবে সবসময়। এটা ভারতেরই অংশ, একদিন তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
গত ৫ আগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে গোটা রাজ্যকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজনের সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, দুনিয়ার সব বড় শক্তির সঙ্গেই সবচেয়ে ভাল সম্পর্ক তৈরি করাই ভারতের উদ্দেশ্য। ভারত একাধিক বহুমুখী শীর্ষবৈঠকের সুফল ঘরে তুলছে বলেও জানান তিনি। বলেন, মোদি সরকার দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নেওয়ার পর মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের মতো দেশগুলিতে সফর করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তিনি নিজে ভুটান, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ, ভুটান সফরে গিয়েছেন।
ভারত-মার্কিন সম্পর্কও অনেক পথ পেরিয়ে এসে ভাল জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে আশ্বাস দেন তিনি। বলেন, আমি ভরসা দিচ্ছি যে, দুদেশের সুন্দর সম্পর্ক আছে। সম্পর্ক যত গভীর হবে, নানা সমস্যাও আসবে। আমেরিকার সঙ্গে আমরা কথাবার্তা চালাচ্ছি, বিরোধের জায়গাগুলি নিকট ভবিষ্যতেই আলোচনায় উঠবে বলে আশা।