ইসলামাবাদ: পাকিস্তান থেকে ফিরে প্রবল আক্রমণের মুখে নভজ্যোত সিংহ সিধু যখন আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই দিলেন যে, তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্রে যাওয়ার পিছনে কোনও রাজনৈতিক অভিপ্রায় ছিল না, স্রেফ বন্ধুর উষ্ণ আমন্ত্রণে সাড়া দিতেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তখন খোদ ইমরান খান তাঁর হয়ে মুখ খুললেন। পাকিস্তানের নয়া প্রধানমন্ত্রী বললেন, পঞ্জাবের মন্ত্রীর নিন্দা করে আসলে উপমহাদেশের শান্তির স্বার্থবিরোধী কাজ করছেন তাঁর সমালোচকরা।
গত ১৮ আগস্ট ইসলামাবাদে ইমরানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাকিস্তান যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে আলিঙ্গন করে দেশে নিন্দা শুনতে হচ্ছে ক্রিকেট মাঠ থেকে বিজেপি হয়ে কংগ্রেসে আসা সিধুকে। তাঁর পাকিস্তান যাত্রা সমর্থন করেননি পঞ্জাবের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহও। আজ চন্ডীগড়ে সাংবাদিক বৈঠকে সিধু বলেন, আমার সেই বন্ধু জীবনে প্রচুর কঠোর পরিশ্রম, সংগ্রাম করেছেন। তিনি এমন কেউ যিনি একটা জায়গায় পৌঁছেছেন, কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য বদলের ক্ষমতা রাখেন।



সিধু আরও বলেন, আমি ফের পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, বৈঠক হয়েছিল ইসলামাবাদে, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে জেনারেল বাজওয়া পৌঁছনোর পর। উনি আমায় প্রথম সারিতে দেখেই উচ্ছ্বসিত হয়ে এগিয়ে আসেন। বলেন, ভারতের ডেরা বাবা নানক থেকে তিন-সাড়ে তিন কিমি দূরে পাকিস্তানের কর্তারপুর সাহিব পর্যন্ত করিডরটি খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যাতে গুরু নানকের ৫৫০-তম প্রকাশ দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে ভক্তদের যেতে সুবিধা হয়। আমার কাছে এটা ছিল একটা আবেগের মূহূর্ত, আর তারপরই ওনার সঙ্গে আলিঙ্গন। জেনারেল বাজওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোনও বৈঠক হয়নি।

পাল্টা সমালোচকদের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সিধু বলেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। তারপরই কারগিল যুদ্ধ ঘটে যায়। ৫২৭ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। তবে এজন্য কি ওনাকে দোষ দেবেন?
২০১৫-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আকস্মিক লাহোর সফরের উল্লেখ করে সিধু বলেন, পরে মোদী সাহেব পাকিস্তানে গেলেন কোনওরকম সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই, তত্কালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে জড়িয়েও ধরলেন। এজন্য কি বলবেন, উনি দেশপ্রেমিক নন! এটা কি দ্বিচারিতা নয়?

ইমরান আজ বলেন, আমার শপথ গ্রহণে পাকিস্তান আসায় সিধুকে ধন্যবাদ দিতে চাই। ও শান্তির দূত হয়ে এসেছিল, পাকিস্তানের মানুষ ওকে স্নেহ, ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। সিধুর সাংবাদিক বৈঠকের পর ইমরান ট্যুইট করেন, ভারতে যাঁরা ওকে নিশানা করছেন, তাঁরা উপমহাদেশে শান্তির স্বার্থ হানি করছেন। শান্তি ছাড়া আমাদের জনগণ এগতে পারবেন না। সামনের দিকে এগতে গেলে পাকিস্তান, ভারত উভয়কেই আলোচনায় সামিল হয়ে কাশ্মীর সহ তাদের সব সমস্যা, বিরোধ মেটাতে হবে। ইমরান বলেন, গরিবি দূর করা ও উপমহাদেশের জনগণকে ওপরে তুলে আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল আলোচনার রাস্তায় আমাদের মতবিরোধগুলি দূর করে ব্যাবসা-বাণিজ্য শুরু করা।