সঞ্চয়ন মিত্র,কলকাতা: পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনা । দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।এই ১৫ দিন ধরে প্রতিদিনই পূর্বপুরুষদের তর্পণ করা যেতে পারে। প্রত্যেকদিন পিতৃকর্মের পৃথক ফলাফলের উল্লেখ রয়েছে। তবে যারা এই প্রতিদিন পিতৃকর্ম করতে পারবেন না তারা পিতৃপক্ষের শেষদিন অর্থাৎ অমাবস্যায় পার্বণ শ্রাদ্ধ করতে পারবেন। পিতৃপুরুষের তর্পণ ও সেইসঙ্গে দেবী মহিষাসুরমর্দিনীর আবাহন —এই দুইয়ে মিলে মহালয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। মহালয়া নিয়ে পুরাণ থেকে শুরু করে মহাভারতে বহু কাহিনী রয়েছে।
মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দশদিন ভীষণ লড়াই করে প্রিয় নাতি অর্জুনের কাছে পরাস্ত হলেন পিতামহ ভীষ্ম। সেই সময় দক্ষিণায়ণ চলছে। বলা হয় দক্ষিণায়নের সময় যমলোকের দ্বার খোলা থাকে এবং বিষ্ণুলোকের দ্বার বন্ধ থাকে। তাই ভীষ্ম তাঁর ইচ্ছা মৃত্যুর বর প্রয়োগ করলেন। প্রথমেই অর্জুনকে বললেন তাঁকে শরবিদ্ধ করে শরশয্যা দিতে। যাতে তাঁর দেহ ভূমি স্পর্শ না করে। অর্জুন তাই করলেন। দক্ষিণায়ন শেষ হয়ে উত্তরায়ণ শুরু হলে বিষ্ণুলোকের দ্বার উন্মুক্ত হয়। ভীষ্ম বিষ্ণুলোক যাবার আকাঙ্ক্ষায় উত্তরায়ণের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। উত্তরায়ণ শুরু হলে ভীষ্ম ইচ্ছামৃত্যু বরণ করলেন। উত্তরায়ণের শেষ কৃষ্ণপক্ষটি হল পিতৃপক্ষ। এই সময়ে পূর্বপুরুষদের তর্পণ করতে হয়। পিতৃপক্ষের শেষ দিন অর্থাৎ অমাবস্যা হলো তর্পণের শ্রেষ্ঠ তিথি।


পুরাণে রয়েছে, ব্রহ্মার পুত্র ছিলেন মহর্ষি অত্রি। তাঁরই বংশধর আর এক সাধক নিমি। নিমি তাঁর সুখের সংসার স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ধর্মাচরণে সুখে দিন কাটাচ্ছেন। এমন সময় একদিন নিমির পুত্র শ্রীমান-এর মৃত্যু হল। পুত্রের মৃত্যুতে শোকবিহ্বল হয়ে উঠলেন নিমি। কিন্তু তিনি অনুভব করলেন তিনি পুত্র শোকে কাতর কিন্তু আত্মার মৃত্যু নেই। তাই তাঁর পুত্রের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় তিনি শাস্ত্রমতে নাম গোত্র এবং মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে শ্রাদ্ধকর্ম সম্পন্ন করলেন। শান্তি কামনায় মুক্তির উদ্দেশ্যে উত্তর পুরুষরা শ্রাদ্ধ তর্পণ করে আসছে এই পরম্পরায়।