বুলন্দশহর: ফের উত্তরপ্রদেশে গোরক্ষকদের তাণ্ডব। বেআইনিভাবে গোহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে জ্বালিয়ে দেওয়া হল পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। হিংসায় মৃত্যু হয়েছে পুলিশ ইন্সপেক্টর সুবোধ কুমার সিংহের। পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধেও উঠেছে গুলি চালানোর অভিযোগ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় সুমিত (২০) নামে এক স্থানীয় তরুণের। সূত্রের খবর, তাঁর শরীরে বুলেটের চিহ্ন রয়েছে। জেলাশাসক অনুজ কুমার ঝা গুলি চালানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, বুলন্দশহরের মৌ-এর বাসিন্দারা গ্রামের পাশে একটি জঙ্গলে গরু ও বাছুরের দেহাংশ পড়ে থাকতে দেখেন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে সেই দেহাংশ নিয়ে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন গ্রামবাসীদের একাংশ এবং একাধিক হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা। অবরোধ করা হয় বুলন্দশহর-গড় হাইওয়ে। অবরোধ তুলতে গেলেই হিংসা ছড়ায় বলে অভিযোগ। শুরু হয় ইটবৃষ্টি। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের গাড়িতে। তিন ঘণ্টা ধরে চলে তাণ্ডব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

এই ঘটনায় তদন্তে সিট গঠন করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়া এডিজি (গোয়েন্দা) ও ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুঃখপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি দু’দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চেয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য এবং দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, প্রশাসন ছেড়ে এখন পাঁচরাজ্যে নির্বাচনের প্রচার নিয়েই বেশি ব্যস্ত বিজেপির হিন্দুত্বের পোস্টার বয় যোগী। বিরোধীদের কটাক্ষ, যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ভোটের প্রচারে ভিনরাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেখানে তো আইনশৃঙ্খলার এই হালই হবে!

২০১৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে এই গো-রক্ষকদের তাণ্ডবেই হিংসা ছড়িয়েছিল উত্তরপ্রদেশেরই মুজাফ্ফরনগরে। বিজেপির বিরুদ্ধে উঠেছিল মেরুকরণের রাজনীতির অভিযোগ। পরে লোকসভা থেকে বিধানসভা ভোটে বিপুল জয় পায় বিজেপি। কিন্তু, সম্প্রতি উপনির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথের লোকসভা কেন্দ্র গোরক্ষপুর এবং উপ মুখ্যমন্ত্রী কেশবচন্দ্র মৌর্যর লোকসভা কেন্দ্র ফুলপুরেও হেরে যায় বিজেপি। তাই অনেকেরই প্রশ্ন, ২০১৯-এর লোকসভার আগে ফের কি সেই গোরক্ষার নামে মেরুকরণের রাজনীতিতেই ফিরছে গেরুয়া শিবির?