কলকাতা: দ্বিতীয়বার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি হল ৩০ মে। দ্বিতীয় দফার প্রথম বছরে কী কী প্রত্যাশা পূরণ করল মোদি প্রশাসন? কী খামতি রয়ে গেল? আর কোন কোন জায়গায় প্রয়োজন উন্নতি? এবিপি আনন্দকে জানালেন খেলার দুনিয়ার তারকারা।


 



ঋদ্ধিমান সাহা (ক্রিকেটার): রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য আরও কাজ করতে হবে কেন্দ্রকে। কৃতি খেলোয়াড়রা স্পোর্টস কোটায় চাকরি পায়। তবে সেই চাকরির সংখ্যা আরও বাড়ালে ভাল হয়। এতে তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলোয় আরও উৎসাহ পাবে। বাবা-মায়েরাও সন্তানদের খেলার জগতে পা রাখতে আরও বেশি করে উদ্বুদ্ধ করবেন। সমৃদ্ধ হবে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্র।

 



মহম্মদ শামি (ক্রিকেটার): নরেন্দ্র মোদি সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর খেলাধুলোর উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। ক্রীড়াক্ষেত্রে কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থ তুলনামূলকভাবে কম জনপ্রিয় খেলাগুলোর উন্নতিতে কাজে লাগছে। পরিকাঠামো আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে আরও উন্নত পরিকাঠামো তরুণদের আরও উৎসাহিত করবে।



মেহতাব হোসেন (ফুটবলার): আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের সমাদর বেড়েছে। ভারতের কদর এখন সর্বত্র। তবে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। বেকারত্ব দেশের ভয়ানক সমস্যা। শিক্ষিত সমাজের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। সন্তানদের পড়াশোনা শেখাচ্ছি। কিন্তু বড় হয়ে ওরা কী চাকরি করবে, কোথায় যাবে! ক্রিকেট ছাড়া অন্যান্য খেলাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। ফুটবলারদের স্পোর্টস কোটায় আরও চাকরির বন্দোবস্ত করা উচিত। আগে সন্তোষ ট্রফি খেললে চাকরি পাওয়া যেত। বাবা-মায়েরা কীসের ভিত্তিতে সন্তানদের খেলাধুলোয় উৎসাহিত করবেন! অর্থনীতির সমস্যা অন্যতম বড় কাঁটা। গরিবদের নিয়ে ভাবতে হবে। প্রত্যেক রাজ্যে শিল্প আনতে হবে।  প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজনকে চাকরি দিতে হবে। তাহলেই সমাজ অনেক মসৃণ গতিতে এগোবে। দেশের বিমান সংস্থাগুলো ঋণে জর্জরিত। দেখতে হবে কীভাবে সেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভাল কাজ করতে হবে।



শিল্টন পাল (ফুটবলার): গ্রামে অনেক কাজ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় গ্রামের রাস্তাঘাটের অনেক উন্নতি হয়েছে। জিএসটি চালু করা ভাল উদ্যোগ। তবে সিঙ্গাপুরে আমার আত্মীয় থাকেন। ওখানে পাঁচ বছর পরে জিএসটি কী দাঁড়াবে আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়। ভারতে জিএসটি শুরুতেই ১৮ শতাংশ না করে ধাপে ধাপে পরিকল্পনামাফিক বাড়ানো যেত। তাতে মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীদের খুব সুবিধা হতো।



দীপা কর্মকার (জিমন্যাস্ট): নরেন্দ্র মোদি সরকার খেলাধুলোয় অনেক সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজু বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। যে সমস্ত অ্যাথলিট অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করছে, তাদের সকলকে সাহায্য করতে টার্গেট অলিম্পিক্স পোডিয়াম (টপ) প্রকল্প নিয়েছিল কেন্দ্র। যেটা ভীষণ কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে। তবে তৃণমূল স্তরে আরও কাজ করতে হবে। ভারতের খেলাধুলোয় প্রতিভার অভাব নেই। ছোট থেকে প্রতিশ্রুতিমানদের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে।



জয়দীপ কর্মকার (শ্যুটার): দেশে খেলাধুলোর জগতে অনেক ইতিবাচকতা এসেছে। স্বচ্ছতা এসেছে। স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই) এখন অনেক বেশি সক্রিয়। মোদির জমানায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে। ভারতকে এখন সকল দেশের মানুষ এক ডাকে চেনেন, জানেন। বেশ মনে আছে ব্রাজিলে গিয়ে দেখেছি, অধিকাংশ মানুষ ভারতের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে সেই ছবিটা এখন বদলে গিয়েছে। তার নেপথ্যে মোদির কৃতিত্ব প্রাপ্য। তবে জাতীয় অর্থনীতির বেহাল দশা। আর সেটা শুধু কোভিড-১৯ এর জন্য নয়। প্রধানমন্ত্রী মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প নিয়েছেন। তবে বাস্তবে সেটা কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে, সংশয় রয়েছে। তেলের দাম বাড়ছে। মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছে না। কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধিতা এখন চরমে। বিশেষ করে যে সমস্ত রাজ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় রয়েছে, সেখানে কেন্দ্রের উদাসীনতার অভিযোগ উঠছে বারবার। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকতে পারে। তবে তার ভিত্তিতে বঞ্চনার অভিযোগ ওঠা বাঞ্ছনীয় নয়। আমরা তো এই দেশেরই নাগরিক। তাহলে রাজনৈতিক মেরুকরণের ফল আমাদের কেন ভোগ করতে হবে!