কলকাতা: দর্জির কাজ করেন বাবা। দারিদ্রের সঙ্গে জন্ম থেকেই। সুন্দরবনের মথুরাপুর এলাকায় পূর্ব রানাঘাটায় বাড়ি মনোয়ার হুসেন মোল্লার। করোনা পরিস্থিতিতে সংসারের একমাত্র ভরসা বাবা মান্নান মোল্লার রোজগার প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু মানোয়ারের মনে জোর অসম্ভব। দারিদ্র্য যতই রাস্তা আটকাক না কেন, বাধা তিনি পেরোবেনই। ভাল রেজাল্ট করার অদম্য জেদই আজ মানোয়ারকে এনে দিল সাফল্য। উচ্চমাধ্যমিকে ৯৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করলেন সেই ছেলে।

বাবা দর্জির কাজ করেন স্থানীয় এক কারখানায়। হার্টের কঠিন অসুখ। অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন বেশ কিছুদিন। লকডাউনের জন্য কোনও আয় নেই। বাড়িতে চার ভাইবোন। মাও খুবই অসুস্থ। তাই সংসার খরচ চালাতে প্রচুর প্রাইভেট টিউশন পড়ান মানোয়ার। নিজের পড়াশোনা তাই করতে হত গভীর রাত্রে।

উচ্চমাধ্যমিকে মানোয়ারের প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯৮, ইংলিশে ৮৭, ভূগোল ৯৮, ইকোনমিক্স ৯৮, নিউট্রিশন ৯৮, এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজে ৭৭। ভবিষ্যতে ইংলিশ অথবা অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করতে চান। কলেজে ভর্তি হতে চান। কিন্তু আর্থিক প্রতিবন্ধকতায় থেমে যাবে না তো পড়াশুনা?



দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে করতে মানসিক ভাবে হার মেনে বসে আছেন মানোয়ারের বাবা। তিনি ভাবছেন, এই হার্টের অসুখ নিয়ে আর ছেলের পড়ায় উৎসাহ দিয়ে উঠতে পারবেন না। এই পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে মৌলবী হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে চলেছিলেন মানোয়ার। কিন্তু স্কুলের হেড মাস্টারমশাই চন্দন মাইতি চান পড়াশুনাতেই মন দিক তাঁর ছাত্র।

গ্রাম থেকে কলকাতা যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। অসহায় পরিবারকে ফেলে অতদূর যাবেন কী করে মানোয়ার? পড়াশোনার খরচই বা চালাবেন কী করে? এত সমস্যা সত্ত্বেও তাঁর স্বপ্ন, অর্থনীতি বা ইংলিশ নিয়ে তিনি একদিন উচ্চশিক্ষা পাবেনই। আর তাঁর পাশে আছেন স্কুলের মাস্টারমশাইরা।