নয়াদিল্লি: করোনা সংক্রমণের পরেও সমাবেশস্থলে ছিলেন দিল্লির ধর্মীয় সমাবেশস্থলে যোগদানকারীরা। উঠেছে অভিযোগ। ২৪০০-র বেশি যোগদানকারীকে বার করা হল বাইরে। সমাবেশে যোগ দিতে এসেছিলেন ২ হাজারের বেশি বিদেশি। ৭০টি দেশ থেকে এসেছিলেন যোগদানকারীরা। এঁরা সবাই এখন রয়েছেন ভারতে। বিদেশিদের সবাইকে চটজলদি ফেরত পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
২৪ মার্চ দিল্লিতে বসে গোটা দেশে লকডাউনের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লির পুলিশ অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ। যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, তার থেকে মেরেকেটে পঞ্চাশ মিটার দূরেই হজরত নিজামউদ্দিন থানা।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, লকডাউনের মধ্যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে দেড় হাজার লোকের জমায়েত চলছিল? সূত্রের খবর, ২৪ মার্চ দিল্লি পুলিশ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের চিঠি দিয়ে জমায়েতস্থল খালি করতে বলে। ২৫ মার্চ উদ্যোক্তারা চিঠি দিয়ে জানান, দেড় হাজার লোককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।  ২৮ মার্চ দিল্লি পুলিশ ফের চিঠি দিয়ে বলে, যাই হোক, জমায়েত বন্ধ করতেই হবে।
কিন্তু, চিঠি চালাচালি ছাড়া আদতে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। দিল্লির এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ৯টি দেশের প্রায় ২০০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তালিকায় ছিলেন-- ইন্দোনেশিয়ার ৭২ জন, তাইল্যান্ডের ৭১ জন, শ্রীলঙ্কার ৩৪ জন, মায়ানমারের ৩৩ জন, মালয়েশিয়ার ২০ জন, নেপালের ১৯ জন, আফগানিস্তানের ১ জন, আলজিরিয়ার ১ জন এবং কিরঘিজস্থানের ১ জন ছিলেন।
এই বিদেশিদের অধিকাংশই পর্যটক ভিসায় ভারতে এসেছিলেন বলে অভিযোগ।  কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁদের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছিল। অভিযোগ, পর্যটক ভিসায় এসে এদের মধ্যে অনেকে ধর্মীয় প্রচার করেন। যা আইনত করা যায় না।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে বিদেশমন্ত্রক কী করছিল? দিল্লির বুকে কেন্দ্রের নজর এড়িয়ে কীভাবে ধর্ম প্রচার করলেন বিদেশিরা?  সূত্রের খবর, এই সব প্রশ্ন ওঠার পর  কেন্দ্র জমায়েতে অংশগ্রহণকারী বিদেশিদের ভিসা খতিয়ে দেখছে।  নিয়ম লঙ্ঘন করা হলে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিজামউদ্দিন এলাকাটি  দক্ষিণ দিল্লি পুরসভার মধ্যে পড়ে। এই পুরসভা বিজেপির হাতে।  তাহলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন? নানা মহলে উঠছে এই প্রশ্নও। কেন্দ্রের দিকে যেমন আঙুল উঠছে, তেমন কেজরিবাল সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারণ,  দিল্লির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেজরিবাল সরকারের হাতে। তারা কেন জমায়েত হঠাতে ব্যবস্থা নিল না?
নিজামউদ্দিন এলাকাটি যে বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে, তার বিধায়ক আম আদমি পার্টির। তিনি কোনও ব্যবস্থা নিলেন না কেন? কেজরিবালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত আপ বিধায়ক আমানতউল্লা খান ট্যুইট করে দাবি করেছেন, ২৩ মার্চ রাতেই দিল্লি পুলিশের ডিসিপি ও এসিপি-কে ফোনে জানাই, ওই এলাকায় প্রায় এক হাজার লোক আটকে রয়েছে। তাহলে পুলিশ এদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করল না কেন?
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, আম আদমি পার্টির বিধায়ক যখন পুরো বিষয়টি জানতেন, তখন কেজরিওয়াল প্রশাসন জমায়েত সরানোর ব্যবস্থা করেনি কেন? সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর এখন কেজরিবাল বলছেন, উদ্যোক্তারা দায়িত্বজ্ঞানহীন। দোষী অফিসারদের ছাড়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দ্যোক্তারা দোষী। কারও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। এলজি এফআইআরের নির্দেশ দেবেন।
পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে,  করোনা নিয়ে উদ্বেগের আবহে নিজামউদ্দিন এলাকার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারাই বা কীভাবে একসঙ্গে এত লোককে এক জায়গায় থাকতে দিলেন?
বিপাকে পড়ে উদ্যোক্তাদের সাফাই, তারা কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করেনি।  ১৫ মার্চ মূল অনুষ্ঠান শেষ হয়। তারপর অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী সেখান থেকে চলে যান। এরই মধ্যে ২৪ মার্চ মধ্যরাত থেকে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়। তার ফলে বাকিরা আটকে পড়েন। তাঁদের ফেরানোর জন্য দিল্লি পুলিশের কাছে বাসের পাসের আবেদন করা হয়।
গ্রাফিক্স আউট
কিন্তু, উদ্যোক্তাদের সাফাই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কারণ  ১২ মার্চ দিল্লি সরকার নির্দেশ দেয়, করোনা প্রভাবিত দেশ থেকে দিল্লিতে এলে সেলফ কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। ১৩ মার্চ নির্দেশিকায় বলা হয়, দিল্লিতে ২০০ জনের বেশি লোকের জমায়েত করা যাবে না।  ১৬ মার্চ বলা হয়, দিল্লির কোথাও ৫০ জনের বেশি লোকের জমায়েত করা যাবে না।
এই নিয়মগুলির কোনওটাই মানেননি উদ্যোক্তারা। এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের মুখে দিল্লির জমায়েতের ঘটনায় এক মৌলানার বিরুদ্ধে মহামারী আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তবে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দিল্লির এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিলে তার দায় কে নেবে?