শ্রীনগর:  ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে তাঁরা আসেননি বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন জম্মু-কাশ্মীর পরিদর্শনে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংসদের প্রতিনিধিরা। তাঁদের আরও দাবি, গোটা অঞ্চলে অস্থিরতার জন্য সন্ত্রাস অনেকটাই দায়ী, যার জেরে উপত্যকায় বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।
৫ অগাস্ট কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে দেয় মোদি সরকার। তারপর থেকে দীর্ঘ সময় উপত্যকায় ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। এখন আস্তে আস্তে সেসব পরিষেবা চালু হয়েছে। তবে গত কয়েকদিনে কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবারও পুলওয়ামায় গুলি চালিয়েছে জঙ্গিরা। আর সেদিনই কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে সেখানে পা রাখল ইউরোপীয় সাংসদদের প্রতিনিধি দল।
বুধবার, সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ওই প্রতিমনিধিদলের একজন বলেন, ভারতের রাজনীতি নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। এখানকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে আসিনি। এসেছি তথ্য-সন্ধানে। আমরা স্রেফ সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। সেটা আমরা করেছি। কাশ্মীরে আসাটা ভাল অভিজ্ঞতা। কাশ্মীর শান্তি ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠায় সঠিক দিশাতেই কাজ এগোচ্ছে। কাশ্মীরের মানুষ শান্তি ও উন্নয়ন চান। তাঁরা স্কুল-হাসপাতাল চান। আরেকজন বলেন, অনেকেই বলেছেন, কাশ্মীরের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র যথেষ্ট অর্থ দেয়। কিন্তু, দুর্নীতির জন্য তা কাজে লাগে না। সেই অর্থের সুফল সাধারণ মানুষ পান না। তাঁরা বঞ্চিত হন।
গতকাল কুলগামে ঘটে যাওয়া জঙ্গিহানার ঘটনার শোকপ্রকাশ করে প্রতিনিধিদল। এক প্রতিনিধি বলেন, সন্ত্রাস হল বিশ্বব্যাপী সমস্যা। নিরীহদের টার্গেট করা হয়। ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ। কিন্তু, বহুবার সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়েছে ভারতকে। তবে, সন্ত্রাস কখনই একটা দেশকে শেষ করতে পারে না। আমরা চাই না, কাশ্মীরের অবস্থা আফগানিস্তানের মত হোক। সন্ত্রাসের মোকাবিলায় ভারত সেরা সমাধান ঠিক বের করবে। এবিষয়ে আমরা সমর্থন করছি।
কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রতিনিধিরা। বলেন, আমরা অল্প সময়ের জন্য এসেছি। তবে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশের অগ্রগণ্য রাজ্য হওয়ার সবরকম বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের) আগে, কাশ্মীর পিছিয়ে পড়া ছিল। এখন আশা তৈরি হয়েছে যে দ্রুত এই অবস্থার উন্নতি হবে এবং পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাংসদদের মঙ্গলবার সমালোচনা করেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। একইসঙ্গে আক্রমণ করেন কেন্দ্রকে। বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাংসদদের এমন এক বেসরকারি প্রতিনিধিদলকে কাশ্মীরে যেতে দেওয়া হল, যে দলে মূলত মুসলিম ও ইসলাম-বিরোধীদের তৈরি। এরা কারা? কেন আমরা এদের কাশ্মীর দেখতে দেব? এরা কোনও সরকারি দলও নয়। এরা সেই সব মানুষ যারা ইসলাম ও মুসলিমদের ঘৃণা করে এবং হিটলারকে ভালবাসে। এদের মধ্যে অনেকেই ফ্যাসিবাদে বিশ্বাসী। এদের এনে কাশ্মীরিদের কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে?
এদিন এই আক্রমণের জবাব দেয় ইইউ প্রতিনিধিদল। তারা বলেন, এটা বলে দিতে চাই যে, আমরা নাৎসি বা এমন কেউ নই যারা ইসালমকে ঘৃণা করে এবং হিটলারকে সমর্থন করে। তাই যদি হত, তাহলে মানুষ আমাদের নির্বাচিত করতেন না। আমাদের এধরনের কথা বলা হলে, ভীষণ রাগ হয়।