কলকাতা: বারবার তিনি খবরে এসেছে গত ১০ মাসে। কেউ বলেন তিনি অরণ্যদেব, কেউ বলেন তিনি সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট। কেউ বলেন তিনি জনগণের বিচারপতি। কেউ বলেন তিনি আইনের এ বি সি ডি-ও জানেন না। বিধাননগরে নিজের ফ্ল্যাটে বসে এবিপি আনন্দের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডা দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিয়োগ দুর্নীতি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বললেন।
যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত, তাঁদের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সে প্রসঙ্গে মুখ খুলে তিনি বলেন, ''তদন্তের সময় বেঁধে দেওয়ার কারণ, যে রাজনীতিবিদ, যে আধিকারিকদের কথা বলছি, তাঁরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত কৌশলী। তাঁদের প্রচুর টাকা। প্রচুর টাকা খরচ করে তাঁরা আইনি পরামর্শ নিতে পারবেন। আর তাঁদের আইনি পরামর্শ দেওয়ার মত সারা ভারতবর্ষের যে কোনও প্রান্ত থেকে অনেকেই আছেন। নির্দিষ্ট সময় যদি দেওয়া না থাকে, তবে তাঁরা যে কোনওভাবে সেই দিনটি এড়িয়ে যাবে। আর যদি সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যাঁন তাঁরা, তবে অনেক প্রমাণই নষ্ট করে দিতে পারেন তাঁরা। তাই কোর্টের আদেশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। সময়ের মধ্যে সবাই গিয়েছেন। এমন কেউ নেই, যে যেতে পারেননি। না গেলে ভয়ঙ্কর কাণ্ড হত। আমি আবার আইন প্রয়োগ করতাম। সেই ক্ষমতা আমার রয়েছে।''
সাক্ষাৎকার সম্প্রচারিত হওয়ার পর হতে পারে বিতর্ক। শুরু হতে পারে সমালোচনা। কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বলছেন, 'শুধু আমি নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে বিচারপতি রুখে দাঁড়াবেন, তিনিই প্রোজেক্টেড হবেন।' যোগ করেছেন, 'আমায় জুডিশিয়ারি থেকে বহিষ্কার করে দিলেও, আমি মনে করি, যা করেছি ঠিক করেছি। আমি জানি বেকার জীবন কী। রুপোর চামচ মুখে দিয়ে জন্মাইনি। টেরর মাঝেমাঝে অত্যন্ত ভাল ফল দেয়। অফিসারদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে যে বেনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না।'
এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, 'আমি জীবনানন্দকে মনে রাখতে চাই। যিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মারা যাবার পরে। অন্তত একটা-দুটো রায় দিয়ে যেতে চাই, একটা দুটো নজির স্থাপন করে যেতে চাই যেটা আমি যখন থাকব না, তখন হয়তো কোনও গবেষকের তথ্যে উঠে আসবে যে, একজন জাজ এরকম করতেন। সেটা পাগলামি হতে পারে। বেঁচে কেউ থাকে না। ইতিহাস কাউকেই মনে রাখে না।'