নয়াদিল্লি: রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) আধিপত্য ফলাতে চায় না এবং ক্ষমতায় কে আসছে, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। এমনই মন্তব্য করলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। সংগঠনের আদর্শ নিয়ে সংশয়ের অবসান ঘটাতে এই মন্তব্য করলেন তিনি। সংঘের তিন দিনের কনক্লেভের প্রথম দিনে ৮০ মিনিটের ভাষণে ভাগবত জোর দিয়ে বলেছেন, আরএসএস গণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক নয়। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, আরএসএস মতাদর্শ চাপিয়ে দেয় না বা বিভিন্ন শাখাগুলিকেও নিয়ন্ত্রণও করে না।
বিজেপি আরএএসের নিয়ন্ত্রণে চলে বলে যে সমালোচনা রয়েছে, তা খারিজ করতে গিয়ে ভাগবত এ কথা বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
‘ভবিষ্যতের ভারত-আরএসএসের দৃষ্টিভঙ্গি’ শীর্ষক কনক্লেভে বিরোধী প্রায় সব রাজনৈতিক দলই গরহাজির থেকেছে। ওই দলগুলিকে আরএসএসের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যদিও বিভিন্ন বিজেপি নেতা, কেন্দ্রী মন্ত্রী, বলিউড তারকা, শিল্পী ও শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।
ভাগবত বলেন, ভারতের বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে হবে ও রক্ষা করতে হবে। তা সমাজে কোনও রকম বিভেদের কারণ হয়ে ওঠা উচিত নয়। নয় দশকের পুরানো আরএসএসের যাত্রাপথের বিবর্তন এবং ইনক্লুসিভ ইন্ডিয়া সংক্রান্ত দর্শনের কথা বলতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেছেন ভাগবত। তিনি বলেছেন, হিন্দুত্ব আমাদের একসূত্রে বাঁধে এবং আমাদের হিন্দুত্বের দর্শন কারুর বিরোধিতা বা খাটো করা নয়।
উল্লেখ্য, কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি যখন বিভেদের তত্ত্ব ও সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা নিয়ে আরএসএসের প্রতি আক্রমণ জোরাল করেছে সেই সময়ই এই বড়সড় কনক্লেভের আয়োজন করল আরএসএস।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বিভিন্ন ধরনের মতাদর্শের কথা বলতে গিয়ে ভাগবত কংগ্রেসের ভূমিকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, কংগ্রেসের আকারে দেশে একটা সুবিশাল স্বাধীনতা আন্দোলনের শুরু হয়েছিল, যা দেশকে মহান ব্যক্তিত্বদের উপহার দিয়েছিল।
ভাগবত বলেছেন, কে ক্ষমতায় থাকবে, কোন নীতি দেশ গ্রহণ করবে, এই সব বিষয়ে সমাজ ও মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। এর জন্য ব্যবস্থা রয়েছে..আমরা তা নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা শুধু সমাজের আচরণ নিয়ে চিন্তিত।
একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, আরএসএস কোনও ব্যক্তির কাজের প্রচারে বিশ্বাসী নয়, আড়ালে থেকেই কাজ করতে চায়।
ভাগবত বলেছেন, সংঘ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। সহমতের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এখানে প্রত্যেক কর্মীই নিজের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এতে কোনও বিধিনিষেধ নেই।
আরএসএসে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিয়েও বিরোধীদের সমালোচনা খারিজ করে দিয়েছেন ভাগবত। তিনি বলেছেন, মহিলাদের জন্য সংগঠনে রয়েছে পৃথক শাখা।
রাজধানীতে সংগঠনের অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে তিনি বলেছেন, আরএসএস যে কাজ করেছে, তা অতুলনীয়। সংঘের এই কার্যাবলী সম্পর্কে মানুষকে ধারনা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য।
ভাগবত বলেছেন, আরএসএসের লক্ষ্য সামাজিক সংস্কার। আরএসএসের একজন কর্মী সমগ্র সমাজকে নিজের বলে বিবেচনা করেন বলেও তিনি দাবি করেছেন।