মস্কো: বিশ্বে প্রথম করোনা প্রতিষেধক বাজারে এনেছে রাশিয়া। এত দ্রুত করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য বিশ্বের বিজ্ঞানীদের একাংশের প্রশ্নের মুখে পড়েছে রুশ দেশে তৈরি ওই প্রতিষেধক। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন কার্যকরিতা নিয়েও। এই পরিস্থিতিতে প্রতিষেধক প্রস্তুতকারী রাশিয়ার সংস্থা গামালিয়া ইনস্টিটিউট দাবি করল, ওই প্রতিষেধক নিরাপদ, বহু দশক কার্যকরী থাকবে। এর ফলে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত ৪ গুণ বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন-সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত কোনও প্রতিষেধক তৈরিতে ৫ থেকে ১০ বছর সময় লাগে। কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে তা তৈরি হতে অন্তত দেড় বছর সময় লাগবে। কিন্তু তার চেয়েও কম সময়ে রাশিয়া প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে গামলিয়া ইনস্টিটিউটের সহ-অধিকর্তা ডেনিস লোগুনোভ বলেন, ’’ টিকা কতটা নিরাপদ এবং তার কার্যকরিতা কত, তা নিয়ে মানবদেহে প্রয়োগের আগে আমরা বিস্তারিত গবেষণা করেছি। তার ভিত্তিতেই আমরা এই টিকা মানবদেহে প্রয়োগ করেছি। দেখা গিয়েছে প্রতিষেধকটি যথেষ্ট নিরাপদ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম।‘‘
এখানেই থেমে থাকেননি লোগুনোভ। তাঁর কথায়, ’’মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডিগুলিই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতিষেধক দিয়ে আমার লক্ষ্য করেছি যে তাঁদের দেহের অ্যান্টিবডিগুলি আরও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে। স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল তরল এবং শুকনো অবস্থায়। এর পরে আমরা বিশ্লেষণ করি, কোষগুলির রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ছে কি না। লক্ষ্য করা হয়েছিল, সাইটক্সি লিম্ফোসাইটকেও। কারণ রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক।‘‘
কী ভাবে, কত জন স্বেচ্ছাসেবকের উপরে এই প্রতিষেধক পরীক্ষা করা হয়েছিল, তা-ও জানতে চাওয়া হয় লোগুনভের কাছে। তিনি জানান, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের উপর এই প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ’’দুই পর্বে ৩৮ জন করে মোট ৭৬ জনের উপর প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়। টিকার গুণগত মান এক থাকলেও দেখতে ছিল দু‘রকম। সেই জন্যই স্বেচ্ছাসেবীদের দু‘টি দলে ভাগ করা হয়েছি। এক দলকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে শুষ্ক অবস্থার, আর একটি দলকে তরল অবস্থায়।‘‘
যে সব বিজ্ঞানীরা রুশ প্রতিষেধকের সমালোচনা করছেন, তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই প্রতিষেধক পরীক্ষা শিশু ও বৃদ্ধদের উপরে করা হয়নি। রাশিয়া অবশ্য ইতিমধ্যেই ওই প্রতিষেধক উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে।