ত্রিচূর (কেরল): কেরল সফরে রাজ্যে ক্ষমতাসীন সিপিএম নেতৃত্বাধীন পিনারাই বিজয়ন সরকারকে তীব্র আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদি। শবরীমালা ইস্যুই দেশের মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে রাজ্যের সংস্কৃতির অপমান করার চেষ্টা করছে কমিউনিস্ট সরকার, বলেছেন তিনি। বিজেপি যুবমোর্চার সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা তাঁকে যত পারেন, গালাগালি দিন, কিন্তু কৃষকদের যেন বিভ্রান্ত না করেন। যুবকদের উন্নয়নে বিরোধীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মোদি বলেন, শবরীমালা গোটা দেশে নজর কেড়েছিল। ভারতের জনগণ দেখেছেন, কীভাবে কেরলের কমিউনিস্ট শাসকরা রাজ্যের সংস্কৃতির অবমাননা করার চেষ্টা করেছেন। কেন ওরা এমন করছে? এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, কেরলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আক্রান্ত। যে দলটা রাজ্য চালাচ্ছে, এটা তাদেরই কাজ। তাঁর সরকার দেশের রান্নাঘর ধুম্রমুক্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পর সব রান্নাঘর ধোঁয়ামুক্ত করার প্রয়াস চালিয়েছি। সে সময় সারা দেশের মাত্র ৫৫ শতাংশ রান্নাঘরে গ্যাসের সংযোগ ছিল, আজ ৯০ শতাংশ ঘরে সংযোগ এসেছে।
বাম দলগুলি ও কংগ্রেসের মুখে গণতন্ত্রের কথা ‘সবচেয়ে বড় প্রহসন’ বলেও মন্তব্য করেন মোদি।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, কংগ্রেস বা বামেদের কেউই নারীর ক্ষমতায়নে মোটেই ভাবিত নয়। বলেন, ওদের এ নিয়ে চিন্তা থাকলে তিন তালাক প্রথার অবসানে এনডিএ-র প্রয়াসের বিরোধিতা করত না। মোদি আরও বলেন, ভারতে অনেক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন। কিন্তু তাঁদের একজনও কি কমিউনিস্ট নেত্রী?
গত সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট সন্তান জন্মদানের বয়সের মধ্যে থাকা মহিলাদের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে সব বয়সের মেয়েদের সেখানে ঢোকায় সবুজ সঙ্কেত দেয়।
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এই প্রথম নয়, গত ১৫ জানুয়ারিও শবরীমালা ইস্যুতে কেরলের সিপিএম সরকারের নিন্দা করে বলেন, ওদের ভূমিকা ‘সবচেয়ে নিন্দাজনক আচরণের’ অন্যতম বলে ইতিহাস মনে রাখবে। যদিও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের রায় রূপায়ণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে পাল্টা জানান বিজয়ন।
প্রধানমন্ত্রী আজ তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে আর্থিক ভাবে গরিবদের শিক্ষা, চাকরিতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের বিরোধীদেরও সমালোচনা করেন। সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির জন্যই তামিলনাড়ুতে এ ব্যাপারে সন্দেহ, সংশয়, অনাস্থার বাতাবরণ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। প্রসঙ্গত, ডিএমকে সহ কয়েকটি দল ওই সংরক্ষণে আপত্তি তুলেছে। তিনি দাবি করেন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সবাইকে সুযোগ দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই সরকার ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এমন ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে দলিত, আদিবাসী, অন্যান্য পশ্চাত্পদ সম্প্রদায়ের (ওবিসি) ক্ষতি হবে না, যাঁরা এখনই সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে তামিলনাড়ুতে মুষ্টিমেয় কিছু লোক নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণে সন্দেহ, অনাস্থার পরিবেশ তৈরি করছে। এহেন নেতিবাচক মনোভাব সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকার আবেদন করছি।
তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের মহগঠবন্ধনের উদ্যোগকেও কটাক্ষ করে মোদি বলেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে ‘এই পাহারাদারকে সরাতে’ই ওরা নিজেদের ‘মতবিরোধ’ সরিয়ে রেখে হাত মেলাচ্ছে। পাশাপাশি তাঁর সরকার দেশকে দুর্নীতি, স্বজনপোষণমুক্ত করতে , কার্যকর পদক্ষেপ করছে বলে দাবি করেন, বিদেশে পাড়ি দিলেও আর্থিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।