কলকাতা: আষাঢ় মাস শুরু হওয়ার তিনদিন আগেই শুক্রবার বাংলায় পা দিল বর্ষা। আর বাঙালির কাছে তো বর্ষা মানেই ইলিশ! বাঙালির ইলিশ-আবেগ উস্কে আরও উস্কে দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবছর পাতে ইলিশের কমতি হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। লকডাউনে অনেকের অনেকর ক্ষতি হলেও, এই একটা লাভ অন্তত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় মৎস্য শিক্ষা সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী বিজয়কালি মহাপাত্রর মতে, এবার বেশি ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা। তিনি বলেন, লকডাউনে দূষণ কমেছে। এছাড়া, গত দু’মাস লকডাউনের জন্য মোহনায় মাছ ধরা হয়নি। ফলে মাছ বেশি মিলবে। এর পাশাপাশি স্বাদও ভাল হবে।
বিশেষজ্ঞদের এই কথা শুনে আশায় বুক বাঁধছেন মত্স্যজীবীরাও। মৎস্য আমদানিকারক সংস্থার সভাপতি অতুলচন্দ্র দাসের কথায়, বর্ষা ঠিক, সময়ে এসেছে। মেঘনা, পদ্মা-যমুনাতে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সাইজও বড়, এবছর বেশি মাছ মিলবে। ৭ জুনের পর থেকেই বোঝা যাবে কত ইলিশ মিলছে। একইভাবে, সুন্দরবন সামুদ্রিক মৎস্যজীবী শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক সতীনাথ পাত্র বলেন, লকডাউনে দূষণ কমেছে, আবহাওয়া ভাল, ভাল ইলিশ মিলবে বলে আশা করছি।
লকডাউনের জেরে প্রায় তিন মাস বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে সমুদ্রে মাছ ধরা শুরু হবে। ইলিশ-লাভের আশা নিয়েই সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানা ও ফ্রেজারগঞ্জের মৎস্যজীবীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সহ-মৎস্য অধিকর্তা জয়ন্তকুমার প্রধান বলেন, বৃষ্টি হচ্ছে, মিষ্টি জল নামছে, এবার ভাল ইলিশ মিলতে পারে। কাকদ্বীপের মৎস্যজীবী অবর্ণ দাসের আশা, লকডাউনে রোজগার বন্ধ ছিল। ইলিশ মিললে, কিছু পয়সা আসবে।
শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি তুঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, শঙ্করপুর, পেটুয়াঘাট, মন্দারমণি-সহ সব মৎস্যবন্দরেও। অনেকে বলেন, ইন্দ্র স্বর্গের রাজা হলেও, দেবলোকে যেমন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের প্রাধান্য, ঠিক তেমনই মাছের রাজা রুই হলেও, মৎস-রাজত্বে ইলিশের প্রভাবই সবথেকে বেশি। এহেন ইলিশের অপেক্ষায় এখন মুখিয়ে রয়েছেন খাদ্যরসিকরা।
বর্ষা এসে গিয়েছে। এবার পাতে ইলিশ আসবে কবে? সেই অপেক্ষাতেই বসে ইলিশ-বিলাসী বাঙালি।