কলকাতা: তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে মেয়ো রোডের জনসভা থেকে বক্তব্য রাখলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, আগামীতে যুবরাই সমাজ গড়বেন। বাংলার মাটি গর্বের মাটি। ভয় নয়, রুখে দাঁড়ান, এটাই হবে আমাদের অঙ্গীকার।
বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, নতুন যাঁরা ক্ষমতা উপভোগ করছেন, তাঁরা ভাবছেন একটু চমকাই। তাঁরা জীবনে চমকানো কাকে বলে জানে না। আমরা আন্দোলন করে উঠে এসেছি, আমাদের কী চমকাবেন? গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল।
কেন্দ্রকে তোপ দেগে মমতা বলেন, একজন মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। প্রতিবাদ, লড়াই করা আমাদের কাজ। কাজ দেবে না, চাকরি দেবে না, খাবার দেবে না, শুধু দেবে ধর্মের বাজার। তাঁর কটাক্ষ, ধর্মের নামে ভেজাল ধর্মের দোকান চলছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফরকে কটাক্ষ করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, স্বদেশ থেকে বিদেশ শুধু ঘুরে বেড়ানো হচ্ছে। কিছু অবসরপ্রাপ্ত লোককে কিছু পদে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রকে অর্থের জোগান দিতে আরবিআই-এর নির্দেশ নিয়ে মমতা বলেন, হঠাৎ বলল ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি দিয়ে দেওয়া হোক। হঠাৎ দেশে বিপদ আসলে কী করে সামলাবে? রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গচ্ছিত টাকা, সোনা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
কাশ্মীর নিয়েও মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, কাশ্মীর নিয়ে কাউকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। বন্দুকের নল দিয়ে চেপে দেওয়া হয়েছে মুখ। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সিবিআইয়ের তলব প্রসঙ্গে মমতা বলেন, এজেন্সিকে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলিকে হেনস্থা করা হচ্ছে। কখনও বিধায়ক, সাংসদকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। আজ আমার ভাইকে ডেকেছে, কাল আমাকে ডাকবে। জেলে যেতেও তৈরি।
কমিশনের ও আয়করের নোটিস নিয়েও এদিন সরব হন মমতা। বলেন, নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগাচ্ছে। কমিশনকে দিয়ে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। দলের অ্যাকাউন্ট নিয়ে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। সব বিরোধী দলকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা।  মমতা দাবি করেন, রাজ্যসভার সাংসদদের এজেন্সির ভয় দেখানো হচ্ছে। ভয় দেখিয়ে রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ পেয়েছে বিজেপি। কর্ণাটকে সরকারের পতন হল, কেউ কিছু বলল না।
মমতা জানিয়ে রাখেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কাছে তিনি মাথা নত করবেন না। বলেন, বিজেপি বলছে রাজ্যের ১০৭ জন বিধায়ক নাকি সঙ্গে আছে। তাঁর কটাক্ষ, ৭ জন বিধায়কও সঙ্গে নেই বিজেপির। মমতা যোগ করেন, আমাকে দুটো বছর দিন, লড়াই করতে করতে দিল্লিকে বদলে দেব।  বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ওরা রাবণ পুজো করে বড় হয়েছে। অত্যাচারের জন্য অনেক আইএএস চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
ছাত্র পরিষদের আগামী কর্মকাণ্ড নিয়ে মমতা বলেন, ১৫ নভেম্বর বেলা ১টায় প্রত্যেক কলেজ ইউনিটকে নিয়ে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৈঠক হবে। নেতৃত্ব দিতে ইউনিটগুলি থেকে ছাত্র-ছাত্রীকে তুলে নিয়ে আসা হবে। দরকারে প্রতি জেলা থেকে নেতা-নেত্রী ঠিক করা হবে। দরকার হলে ১৪ ও ১৫ নভেম্বর দু’দিন বৈঠক করা হবে বলেও জানান তিনি। মমতা মনে করেন, এই নেতৃত্ব ঠিক হলে ৫০ বছরেও সিপিএম-বিজেপি বাংলার দিকে তাকাতে পারবে না। এই কাজে যাঁরা উৎসাহী তাদের নাম, ঠিকানা সবুজ পাতায় লিখে দেওয়ার আর্জি জানান তিনি।
মমতা বলেন, দেশে শুধুমাত্র বাংলায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীরা পেনশন পান। বিএসএনএল, বেঙ্গল কেমিক্যাল, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীদের কাজ চলে যাচ্ছে। গাঁধী মূর্তির পাদদেশে কর্মীরা ১৩ দিন ধরে অনশন করছে। আমরা তাঁদের পাশে আছি। তিনি যোগ করেন, জেসপ, ডানলপ কারখানা চালুর জন্য এতদিন ধরে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করছি। কিছুতেই আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না কেন্দ্র। বাংলার নাম পরিবর্তনে সবুজ সঙ্কেত দিচ্ছে না কেন্দ্র। শুধু বাংলার নাম বদনাম করতে চায়, এটা প্রতিহিংসামূলক আচরণ।
এদিন মমতা মনে করিয়ে দেন, তৃণমূলই একমাত্র স্বচ্ছ দল, সেজন্য কাউকে ভয় পায় না। বলেন, কেউ যদি ১০ টাকা নেয়, তাঁর বাড়িতে বলা হচ্ছে কাটমানি ফেরত দাও। নেত্রীর প্রশ্ন, নির্বাচনের আগে কোথা থেকে আসে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা? এজেন্সি মারফত টাকা দেওয়া হয়েছে। দেশ বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
বিজেপির পাশাপাশি সিপিএমকেও আক্রমণ করেন মমতা। বলেন, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে সিপিএম। তাঁরাও এখন চুপ।