নয়াদিল্লি: দেশে সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি বলে অনেকেই কেরলকে নিয়ে গর্বিত। কিন্তু শিক্ষার সঙ্গে সবসময় সভ্যতা, সহানুভূতি, পারস্পরিক শ্রদ্ধার যোগ থাকে না। উত্তর কেরলের মলপ্পুরমের ঘটনা সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। মানবিকতা শব্দটার সঙ্গে এই ঘটনার কোনওরকম যোগ নেই।


এই ঘটনা ২৭ মে-র। ১৫ বছরের একটি অন্ত:সত্ত্বা হাতিকে বাজি ভর্তি আনারস খেতে দেন মলপ্পুরমের বাসিন্দারা। হাতিটির মুখের মধ্যেই ফেটে যায় সেই আনারস। জলের মধ্যে দাঁড়িয়েই হাতিটির মৃত্যু হয়।

বন বিভাগের আধিকারিক মোহন কৃষ্ণন র‌্যািপড রেসপন্স টিমের সঙ্গে হাতিটিকে উদ্ধার করতে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, হাতিটি মারাত্মক জখম হয়েছে। ক্ষুধার্ত হাতিটির সঙ্গে এরকম নৃশংস আচরণের কথা সবাইকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বন বিভাগের এই আধিকারিক লেখেন, ‘হাতিটি সবাইকে বিশ্বাস করেছিল। এটাই তার একমাত্র ভুল। সে খাওয়া শুরু করার পর যখন আনারসটি ফেটে যায়, তখন সে নিশ্চয়ই নিজের কথা ভাবছিল না, সন্তানের কথাই ভাবছিল। ১৮ থেকে ২০ মাসের মধ্যে সন্তানের জন্ম দিতে চলেছিল।’

মোহন আরও লেখেন, ‘হাতিটি খাবারের সন্ধানে জঙ্গল ছেড়ে গ্রামে ঘুরছিল। বিস্ফোরণে তার জিভ ও মুখে মারাত্মক আঘাত লাগে। এরপরেও সে কাউকে আক্রমণ করেনি। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাতর হয়ে সে রাস্তায় ছুটতে থাকে। সেই সময়ও সে কোনও বাড়ি ভাঙেনি। সেই কারণেই আমি বলছি, হাতিটি দেবী। হাতিটিকে তার যোগ্য বিদায় জানানো উচিত ছিল। সেই কারণে সে যেখানে থাকত, সেখানেই তার  শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’

হাতিটির ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘হাতিটির গর্ভে দু’মাসের ভ্রূণ ছিল। সে এই প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে চলেছিল। হাতিটির মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত।’

কেরলের এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব বন্যপ্রাণ আন্দোলনকারী ও সাংসদ মানেকা গাঁধী। দেশজুড়ে সমালোচনার জেরে কেরলের বন বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। হাতিটিকে যারা মেরেছে, তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।