কলকাতা: আকাশে উড়ছে ড্রোন। রাস্তায় পুলিশের কড়া প্রহরা। গলির মোড়ে নাকা চেকিং। গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ। সংক্রমণ ঠেকাতে সপ্তাহের দু’দিনের লকডাউনের প্রথমদিন কলকাতাজুড়ে দেখা গেল এমনই সব ছবি।


আজ সকাল ৬টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত লকডাউন। তারপর এ সপ্তাহে আবার লকডাউন শনিবার। আজ সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে পুলিশের নজরদারি। বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ব্যারিকেডও। দীর্ঘ আনলক পর্বের পর সপ্তাহে দুদিনের লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করাই এখন পুলিশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।


রাজাবাজার এলাকায় ড্রোনে নজরদারি চালায় পুলিশ। এপিসি রোডের মধ্যে বিভিন্ন গলিতেও চলে নজরদারি। শ্যামবাজারেও একই ছবি। ছাড় দেওয়া হচ্ছে না সাইকেলআরোহীদেরও।


উল্টোডাঙা মোড়ে পথচলতি গাড়ি দাঁড় করিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ। কাঁকুড়গাছি চত্বরে দেখা দেল লকডাউন ভঙ্গকারীদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।


রবীন্দ্র সরণী পোদ্দার কোর্টে কলকাতা পুলিশের অ্যাডিশনাল কমিশনার দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে বিরাট বাহিনী। রবীন্দ্র সদনে নজরদারি চালায়। ধর্মতলায় পুলিশের নাকা, ড্রোনে নজরদারি চালানো হয়।


রুবিতে পুলিশের নাকা চেকিং চলেছে। সায়েন্স সিটি মোড়ে গাড়ি আটকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এন্টালি ফিলিপ্স মোড়ে ড্রোন উড়িয়ে, স্ক্রিনে নজরদারি চালানো হয় গলিতে গলিতে। রাস্তায় নাকা চেকিং। মাইকে প্রচার পুলিশের।


মানিকতলা মোড়ে বাজার বন্ধ। ধর্মতলা, রাসবিহারী, পার্ক স্ট্রিট, গড়িয়াহাটে পুলিশি নজরদারি। গাড়িতে চেকিং থেকে শুরু করে ধরপাকড় করে পুলিশ।


এন্টালি থানা এলাকার ফিলিপস মোড়ের কাছে ড্রোনের সাহায্যে পুলিশের নজরদারি। চলছে নাকা তল্লাশি। পাশাপাশি মাইকে প্রচারও চলছে। এরইমধ্যে ড্রোন এর সাহায্যে বিভিন্ন গলিতে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ।


রাজাবাজার এলাকায় ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি পুলিশের। এমনিতে বড় রাস্তার মোড়ে চলছে পুলিশের নাকা তল্লাসি। কিন্তু গলিতে নজরদারি চালানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন।


ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে হেয়ার স্ট্রিট থানার উদ্যোগে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি। কোথাও কেউ লকডাউন অমান্য করছেন কি না, তা দেখতে ড্রোন উড়িয়ে নজরদারি।


পোস্তা থানা এলাকার রবীন্দ্র সরণিতে ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি। ওই এলাকার কনটেনমেন্ট জোনে স্থানীয় যুবকদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ব্যবহার করছে পুলিশ। ওই যুবকরাই পাড়ার বাসিন্দাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এনে দিচ্ছেন।


ফুলবাগান থানার কাঁকুড়গাছি মোড়ে নাকা তল্লাশি চলছে পুলিশের। ওই এলাকায় লকডাউন অমান্য করায় বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।


বেহালার বিভিন্ন জায়গায় সকাল থেকেই চলে পুলিশের নাকা তল্লাশি। বিজি প্রেস এলাকায় সাইকেল আরোহী এক যুবক বাইরে বেরনোর উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেননি। তাঁকে পুলিশই বলে নিজের সাইকেলের চাকার হাওয়া ফেলে দিতে। ওই এলাকায় লকডাউন না মানায় পুলিশের শাস্তির মুখেও পড়েন কেউ কেউ। তারাতলায় লকডাউন বিধি না মানায় কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।


শহরের পাশাপাশি, জেলাতেও দেখা যায় পুলিশি তৎপরতা। সর্বত্র লকডাউন কার্যকর করতে প্রশাসন সব ধরনের প্রচেষ্টা করে। বাঁকুড়া শহরে সকাল থেকে দোকানপট বন্ধ। বন্ধ বাজারও। রাস্তা প্রায় সুনসান। চলছে না যানবাহন। বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড।


উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের চাঁপাডালি মোড় বা ডাকবাংলা মোড় কার্যত সুনসান। বন্ধ দোকানপাট, বাজার। রাস্তায় মোতায়েন পুলিশ। লোকজন প্রায় চোখেই পড়ছে না।


হুগলিতে লকডাউনে বন্ধ সব ফেরি সার্ভিস। । বনধ বাজার , দোকানপাট। বাস গুমটিতে দাঁড়িয়ে সারি সারি বাস। রাস্তায় লোকজনও অন্যদিনের মতো বেরোননি। শুধু কয়েকটি ওষুধের দোকান খোলা।


দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে সকাল তকে দোকানপাট বন্ধ। পুলিশ টহল দিচ্ছে বিভিন্ন বাজার এবং ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে। বাজারও খোলেনি। রাস্তায় কোনও গাড়ি বা পথচারীকে দেখলে বাইরে বেরনোর কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। সন্তুষ্ট হলে তবেই ছাড়ছে পুলিশ। বারুইপুরে দোকানপাট বন্ধ। বাজার খোলেনি। সকাল থেকেই রাস্তায় পুলিশের টহল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে রাস্তায় যানবাহন চলছে না। পুলিশের কড়া নজরদারি। সকালের দিকে কয়েকটি চায়ের দোকান খোলা ছিল। পুলিশ তা বন্ধ করে দেয়। কয়েকটি মোড়ে রাস্তায় যে জটলা ছিল, পুলিশ তা লাঠি উঁচিয়ে হটিয়ে দেয়।


নদিয়ার সান্তিপুর থানা লাকার ফুলিয়েয় বন্ধ দোকানপাট। রাস্তায় লোকজনের চলাচল নেই। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কও প্রায় সুনসান। শুধু কিছু পণ্যবাহী লরি যাতায়াত করছে। এর পাশাপাশি, রানাঘাট, কল্যাণী, চাকদহে একই ছবি।


হাওড়ায় রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। দোকানপাট বন্ধ। হাওড়া ময়দানে দাঁড়িয়ে পরপর বাস। হাওড়া বাসস্ট্যান্ডে কোনও বাস নেই। হাওড়া ব্রিজে চলচে নাকা চেকিং। জরুরি কারণ ছাড়া কাউকে ছাড়া হচ্ছে না। শিবপুর, বালি, ধূলাগড়ে চলছে নাকা তল্লাশি। কার্যত বনধের চেহারা হাওড়ায়।


মালদার ইংরেজবাজার থানা এলাকায় পুলিশের নজরদারি অভিযান। ইংরেজবাজারে বালুরচর সহ কয়েকটি জায়গায় লকডাউন অমান্য করায় পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হয়। কিছু দোকান খোলা ছিল। পুলিশ সেগুলি বন্ধ করে দেয়। মোটরবাইকে যাঁরা অপ্রয়োজনে যাতায়াত করছিলেন, তাঁদের পুলিশের লাঠির মুখে পড়তে হয়। দুএক জায়গায় বাজার খোলা ছিল। সেই সব বাজার বন্ধ করে দেয় পুলিশ।


বীরভূমে জেলা জুড়েই পুলিশের কড়া নজরদারি। রাস্তায় নেমে তদারকি করেন পুলিশ আধিকারিকরা। সিউড়ি, দুবরাজপুর, কীর্ণাহার, সাঁইথিয়ায় দোকানপাট, বাজার, সব বন্ধ। কেউ রাস্তায় বের হলে তাঁর কাছে কারণ জানতে চাইছেন পুলিশ কর্মীরা। সন্তুষ্ট না হলে ফেরত পাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিউড়িতে রাস্তায় নেমে তদারকি করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ আধিকারিকরা। পুলিশ সূত্রে খবর, সকাল পর্যন্ত মাস্ক না পরে রাস্তায় বেরনোর কারণে ৭ হাজার জনের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বোলপুরে লকডাউন অমান্য করার কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে ৪ জনকে।


বীরভূমের বোলপুরে লকডাউন অমান্য করায় গ্রেফতার ২০ । সাঁইথিয়ায় উপযুক্ত কারণ ছাড়া রাস্তায় বেরনোয় বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তারপর তাঁদের সারি দিয়ে দাঁড় করিয়ে লাঠির বাড়ি মারে পুলিশ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মাস্ক না পরে রাস্তায় বেরনোর কারণে ৭ হাজার জনের বিরুদ্ধে আইনমতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।


পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজার, স্টেশন বাজার, পাণ্ডবেশ্বরে পুলিশের নাকা তল্লাশি। রাস্তায় বেরিয়ে উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পারায় কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। কারণ দেখাতে না পারায় কয়েকজন সাইকেল চালকের সাইকেলের চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি পুলিশের তরফে মাস্ক ব্যবহার ও লকডাউন বিধি মানার জন্য প্রচারও চালানো হয়।