শান্তনু নস্কর ও সমিত সেনগুপ্ত : সফল হল না বনকর্মীদের চেষ্টা। ইয়াস তাণ্ডবের পর সুন্দরবনে মৃত্যু হল একটি বাঘের। চিকিৎসার জন্য সজনেখালি ব্যাঘ্রপ্রকল্পে নিয়ে যাওয়ার পথে ওই রয়্যাল বেঙ্গলের মৃত্যু হয়।
একসময় জল-জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়াত সে। চোখে চোখ পড়লেই ভয়ে আধখানা হত শিকারের প্রাণ। সেই রয়্যাল বেঙ্গলই কি না এগিয়ে আসছে টলমল পায়ে, একটু হেঁটে অল্প বিরতি, ফের আবার এগিয়ে আসার চেষ্টা। নাহ্, এবার আর সম্ভব হল না। শেষ পর্যন্ত ক্লান্তির ভারে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল হলুদ-কালো ডোরাকাটা।
সুন্দরবনের হরিখালি ফরেস্ট ক্যাম্পে, মিষ্টি জলের পুকুরের পাশে রবিবার সকালে এই অবস্থায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটিকে দেখতে পান বনকর্মীরা। গুরুতর অসুস্থ বাঘটিকে জল খাওয়ানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে থাকা বাঘকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় তাঁকে জল খাওয়ানোর যে ছবি মুহূর্তে হয়ে যায় ভাইরাল। কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও শেষরক্ষা হল না। চিকিৎসার জন্য সজনেখালি ব্যাঘ্র প্রকল্পে নিয়ে যাওয়ার সময় সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ নদীপথেই তার মৃত্যু হয়। বাঘের মৃতদেহ সজনেখালিতে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। যদিও মানুষের বাঘটিকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা দেখে আপ্লুত স্টেট ওয়াইল্ড লাইফ বোর্ডের সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু। তিনি বলেছেন, 'সুন্দরবনে দুর্যোগ, বিপর্যয়, সেই পরিস্থিতিতে জ্যান্ত বাঘকে বাঁচানোর চেষ্টা। মানুষ বাঘের মুখে জল দিচ্ছে। দারুণ।'
বন দফতর সূত্রে খবর, রয়্যাল বেঙ্গলটি পূর্ণ বয়স্ক। বয়স ১১ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। কীভাবে বাঘটি এত দুর্বল হয়ে পড়ল, কী কারণে তার মৃত্যু হল, তা নিয়ে উঠে আসছে একাধিক সম্ভাবনার কথা। ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞ প্রদীপ ব্যাস বলেছেন, 'এই বাঘটার বয়স হয়েছিল। ইয়াসে ঝড়ের সঙ্গে কটাল, দীর্ঘক্ষণ জল দাঁড়িয়ে থাকে। হয়তো দীর্ঘক্ষণ জলে ভেসে ছিল। দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, খাবার পায়নি।'
গত বুধবার আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তার সঙ্গী হয়েছিল ভরা কটাল। এই দুয়ের জেরে বঙ্গের যে সমস্ত এলাকা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সুন্দরবন।