নয়াদিল্লি: দেশে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আবারও অপরাধ বলে গন্য হতে পারে। মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির তরফে তেমনই সুপারিশ করা হল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তাদের দাবি, বিবাহ একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠান। যেনতেন প্রকারে তাকে রক্ষা করতে হবে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় তাই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে ফের অপরাধ গন্য করার আর্জি জানানো হল। 


এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় ন্য়ায় সংহিতা বিল পেশ করে অমিত শাহ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই বিল নিয়ে মঙ্গলবার একটি রিপোর্ট জমা দেয় সংসদীয় কমিটি। তাতেই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে ফের অপরাধের আওতায় আনার সুপারিশ করে তারা। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সব লিঙ্গের মানুষের জন্যই বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে অপরাধ গন্য করতে হবে। নারী হোন বা পুরুষ, প্রত্যেকেই সমান দায়বদ্ধ।


সংসদীয় কমিটির এই রিপোর্ট যদি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকার, তাহলে তা ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরিপন্থী হিসেবে গৃহীত হবে। কারণ পাঁচ বছর আগে দেশের শীর্ষ আদালত জানায়, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক অপরাধ হতে পারে না এবং তাকে অপরাধ হিসেবে গন্য করাও উচিত নয়।


ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অধিনিয়ম বিল দেশের আইনশৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দেওয়ার তিনটি বিলের মধ্যে একটি। অগাস্ট মাসে সেটি স্বরাষ্ট্র বিভাগীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপি সাংসদ ব্রিজ লাল। যদিও এই সুপারিশের বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরমন। তাঁর বক্তব্য, “ব্যক্তিবিশেষের দাম্পত্যজীবনে প্রবেশের অধিকার নেই রাষ্ট্রের।”


২০১৮ সালে তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিবাহবিচ্ছেদ মামলার ক্ষেত্রে বিষয়টি যুক্তিগ্রাহ্য হিসেবে ধরা গেলেও, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক কখনও অপরাধ হিসেবে গন্য হতে পারে না। আদালত জানায়, মান্ধাতা আমলে স্ত্রীর কাছে প্রভু হিসেবে গন্য হতেন স্বামী। পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর উপর কর্তৃত্ব করতেন পুরুষ। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে গন্য করার রীতিও ঔপনিবেশিক আইন থেকে এসেছে।


২০১৮ সালে ওই রায়ের আগে পর্যন্ত বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক অপরাধ হিসেবে গন্য হতো। আইনে বলা ছিল, স্বামী বা স্ত্রী যদি ব্যাভিচার করেন, স্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া কোনও পুরুষ যদি অন্য় নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, বা কোনও নারী যদি অন্য পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। মহিলাদের যদিও সাজা দেওয়ার নিয়ম ছিল না। পাঁচ বছর আগে সেই আইন বাতিল করে বিবাহবির্ভূত সম্পর্ককে অপরাধমুক্ত করে শীর্ষ আদালত। এবার আদালতের সেই নির্দেশকেই পাল্টে, ফের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ককে অপরাধের আওতায় আনার সুপারিশ করা হল।