কাবুল: এ যেন এক সিনেমা! তালিবানি হামলা কেড়ে নিয়েছে তিন স্বামীকে। বাকি রয়েছেন চতুর্থ জন। সেই চতুর্থ স্বামীকে আকড়ে ধরে জীবনের বাকি কটা দিন কাটাতে চান স্ত্রী। ভুলতে চান তিন স্বামীকে হারানোর যন্ত্রণা। আর মনেপ্রাণে চান এবার শান্তি ফিরুক আফগানিস্তানে। এ কাহিনী পূর্ব আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশের সাদেকাবাদ অঞ্চলের।


১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাজ বিবির। প্রথম স্বামী সেনায় কর্মরত ছিলেন। আর পাঁচজনের মতো তাঁর জীবনও চলছিল স্বাভাবিক ছন্দে। কিন্তু বাদ সাধল নিয়তি। তালিবানের সঙ্গে লড়তে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ওই সেনা।


পাসতুন সমাজের সামাজিক রীতি অনুযায়ী, স্বামীর মৃত্যু হলে বিধবা স্ত্রী দেওরকে বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু, পরিবারের বাইরের কাউকে বিয়ে করতে পারেন না। স্বামীর মৃত্যুর মাস খানেকের মধ্যে তাঁর আরেক ভাইকে বিয়ে করেন তাজ বিবি। তিনিও সেনাবাহিনীতে ছিলেন।


কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস চেকপয়েন্টে কর্মরত ওই সেনা তালিবানের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান। তালিবানের হাত থেকে চেকপয়েন্ট রক্ষা করেন নিজের প্রাণের বিনিময়ে।


এরপর শ্বশুরমশাইয়ের অনুরোধে মাস তিনেক পরে তৃতীয় ভাইকে বিয়ে করেন তাজ বিবি। কিন্তু সে সুখও ক্ষণস্থায়ী হয়। তিনিও পেশায় পুলিশ অফিসার ছিলেন। ২০১৭ সালে তালিবানের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ যায় তাজ বিবির তৃতীয় স্বামীর।


পাঁচ সন্তানের জননী তাজ বিবি ষষ্ঠ সন্তানের মা হতে চলেছেন। সুখবরের আশায় দিন গুনলেও মনে বাসা বেঁধেছে ভয়, আতঙ্ক। ফের তালিবানরা কেড়ে নেবে না তো তাঁর স্বামীকে! আমিনুল্লাকে কোনও ভাবে হারাতে চান না তাজবিবি। চান না তাঁর সন্তানেরা ফের পিতৃহারা হোক।


সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে ফোনে তাজ বিবি বলেছেন, ’’কখনও আমি তালিবানকে দোষ দিই, কখনও মনে হয় এই পরিস্থিতির জন্য আফগান সরকার দায়ী, কখনও মনে হয় বিদেশি শক্তির হাত থাকার ফলেই এই সন্ত্রাস শেষ হচ্ছে না, আবার কখনও মনে হয় আমার এই যন্ত্রণার জন্য আসলে আমার কপাল দায়ী। সবই আমার ভাগ্য।‘‘


ইসলামে বিশ্বাসী তাজ বিবি জানিয়েছেন ধর্ম বলে কাউকে না মারতে। কিন্তু আমাদের এই ভূখণ্ডে যখন খুশি যাকে খুশি মেরে ফেলছি আমরা। আফশোসের সঙ্গে আল্লার( ঈশ্বর)কাছে প্রার্থনা জানিয়েছেন আর যেন এই করুণ পরিণতির মুখোমুখি হতে না হয় তাঁকে।