নয়াদিল্লি: আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই অযোধ্যা মামলার রায় বেরনোর সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব রাজ্যকে সতর্ক থাকতে, উত্তেজনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে বলে বার্তা পাঠাল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার এর পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে, বিশেষত অযোধ্যার নিরাপত্তা রক্ষায় মোতায়েনের জন্য প্রায় ৪ হাজার আধাসামরিক জওয়ান পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ জমি মালিকানা বিতর্ক মামলার রায় ১৭ নভেম্বরের আগে ঘোষণা করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।
রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসনকে সব সংবেদনশীল জায়গায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন ও দেশের কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রকের জনৈক কর্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উত্তইরপ্রদেশ রাজ্য প্রশাসনকে সাহায্য করতে ৪০ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী পাঠিয়েছে কেন্দ্র। একেকটি বাহিনীতে প্রায় ১০০ জন করে জওয়ান থাকে।
সুপ্রিম কোর্টের যে ৫ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চ অযোধ্যা মামলার রায় দিতে চলেছে, তার মাথায় আছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। অযোধ্যার ২.৭৭ একর জমির মালিকানা বিতর্কের আইনি সমাধানের খোঁজে গত ১৬ অক্টোবর একটানা ৪০ দিনের শুনানি শেষ করে বেঞ্চ। এবার যে কোনওদিন রায় বেরতে চলেছে। ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার তিন পক্ষ হিন্দু গোষ্ঠী নির্মোহি আখাড়া, সুন্নি কেন্দ্রীয় ওয়াকফ বোর্ড ও রামলালার মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দিতে হবে। সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে একগুচ্ছ পিটিশন পেশ হয় সুপ্রিম কোর্টে।
রায় যা-ই হোক, উত্তরপ্রদেশ সহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাই কেন্দ্র, রাজ্যের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার অম্বেডকর নগরের কয়েকটি কলেজে আটটি অস্থায়ী জেল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অম্বেডকর নগরের জেলা স্কুল ইনসপেক্টর চিঠি দিয়ে আকবরপুরের তিনটি কলেজের প্রধানকে চিঠি দিয়ে কলেজ ভবন ও সেখানকার সব পরিষেবা স্থানীয় থানার প্রধানদের হাতে তুলে দিতে বলেছেন। তান্ডা, জালালপুর, ভিট্টি, আলাপুর, জইতপুরেও একটি করে কলেজকেও অস্থায়ী জেলের জন্য বাছাই করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, অম্বেডকর নগরের পুলিশ সুপারের লেখা চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যে কলেজগুলিকে অস্থায়ী জেলের জন্য বাছাই করা হয়েছে, পুলিশ সুপারের চিঠিতে তাদের তালিকা রয়েছে।
সন্ত্রাসদমন স্কোয়াড (এটিএস), ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ও স্থানীয় গোয়েন্দা শাখার অফিসাররা ইতিমধ্যেই অযোধ্যায় ক্যাম্প করে রয়েছেন।
৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যের ৭৫টি জেলারই পুলিশ ও প্রশাসন সমেত সব ফিল্ড অফিসারদের ছুটি বাতিল করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
এজেন্সিগুলি সোস্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির ওপর কড়া নজর রাখছে। সেখানে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্টের যে কোনও চেষ্টা রুখবে তারা। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হতে পারে জাতীয় সুরক্ষা আইনের কঠোর ধারায়।
মিরাটে মুসলিম ধর্মগুরুরা অযোধ্যার মসজিদের ইমামদের দ্বারস্থ হয়ে বলেছেন, রায় যে পক্ষের অনুকূলেই যাক, তা মেনে নিয়ে শান্তি, সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য পুরো সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে আবেদন জারি করুন তাঁরা।
রামজন্মভূমি ন্যাস সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার প্রাক্কালে শ্রী রামজন্মভূমি ন্যাসের কার্য্যশালায় (ওয়ার্কশপ) পাথর খোদাইয়ের কাজ বন্ধ রেখেছে।
গত ৫ নভেম্বর বিজেপি নেতাদের পাশাপাশি শীর্ষ আরএসএস নেতৃত্বও কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভির বাসভবনে মুসলিম ধর্মগুরুদের সঙ্গে দেখা করেন যাতে তাঁরা সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্র্রকাশের পর শান্তি, সৌহার্দ্য বজায় রাখার আবেদন জানান।
অযোধ্যার জেলাশাসক অনুজ কুমার এক সাম্প্রতিক আদেশে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে বলে জানিয়েছেন।