গাড়িতে বসে টেনশন ঘামছিলেন। হাতে ছিল ফ্লাইটের টিকিট। লন্ডনে ওড়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। মনে হয়েছিল, ট্রাফিক জ্যাম সর্বনাশ করে দিল। কিন্তু শেষমেষ আজ সেই যানজটকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছেন তিনি। আর বলছেন, এটা গণপতি বাপ্পার আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছু নয়। 

বৃহস্পতিবার আকাশে ওড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্য়েই ভেঙে পড়ে  লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিমান। বিমানে থাকা ২৪২ জন আরোহীর মধ্য়ে দুশো একচল্লিশ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। বিমানটি ভেঙে পড়ে একটি হস্টেলের ক্যান্টিনে । আর তার ধ্বংসাবশেষ গিয়ে পড়ে, পাশেই মেডিক্য়াল পড়ুয়াদের হস্টেলে। সেখানেও বহু জনের মৃত্যু হয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৬৫ জনের মৃত্যু  সুনিশ্চিত। সেই হত ভাগ্যদের মধ্যে একজন হতে পারতেন ভূমি চৌহানও। কিন্তু ভাগ্য তাঁকে রক্ষা করল। 

ভূমি চৌহান সংবাদসংস্থা এএনআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানান, গতকাল ট্রাফিকে ফেঁসে গিয়েছিলেন বাজে ভাবে। বারবার ঘড়ির দিকে দেখছিলেন। হাজার চেষ্টা করেও সময়ে পৌঁছতে পারেনি এয়াপোর্টে। মিনিট কয়েক বিলম্ব হয়ে যায়। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য ফ্লাইট উড়ে যায়। কিন্তু যখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জানতে পারেন, যে ফ্লাইটের টিকিট হাতে তিনি এতক্ষণ আফশোস করছিলেন, সেই ফ্লাইটের সঙ্গে ঘটে গিয়েছে ভয়ানক দুর্ঘটনা। 

ভূমি চৌহান বলেন, "...আমরা চেক-ইন গেটে ১০ মিনিট দেরিতে পৌঁছই, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি, এবং আমি ফিরে আসি। ওরা বলেছিল, এতে ফ্লাইট আরও দেরি হবে। আমদাবাদে এদিন এত যানজট ছিল, অনেক দেরি হয়ে যায়। যখন আমি জানতে পারি যে ফ্লাইটটির দুর্ঘটনায় ঘটেছে, তখন আমি একদম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই যে আমি নিরাপদে আছি...এমন ভয়াবহ ঘটনা...।"

গুজরাতের ভারুচে ভূমির পারিবারিক বাড়ি। সেখানেই সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন তিনি। এখনও যেন ঘোরের মধ্যেই তিনি। ভাবতেই পারছেন না, যে বিমানের টিকিট হাতে তিনি আক্ষেপ করছিলেন, কয়েক মিনিটের জন্য মিস করে গেছিলেন ফ্লাইট, সেই বিমানযাত্রীদের ১ জন ছাড়া সকলেই মৃত। বীভৎস ভাবে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। 'এ ভাগ্য ছাড়া আর কী, ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া আর কী '।  তিনি বারবার শুধু ধন্যবাদ জানাচ্ছেন ঈশ্বরকে।  গলার মধ্যে যেন দলা পাকিয়ে আসছে কথা গুলো। কান্নাভেজা গলায় বললেন, গণপতি বাপ্পা  বাঁচিয়েছেন ! 

 আবেগপ্রবণ ভূমি চৌহানের মা-ও।  ANI কে জানালেন, দেবী মায়ের আশীর্বাদেই মেয়ের জীবন রক্ষা হয়েছে। "আমরা দেবী মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ।  তিনি আমার মেয়েকে রক্ষা করেছেন। ও ওর সন্তানকে আমার কাছে রেখে গিয়েছিল। ওর জন্যই ফিরে আসতে এসেছে ও। "

কেন ঘটল এমন বিপর্যয়? এখনও কারণ ঘিরে ধোঁয়াশা। উত্তর মিলতে পারে বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকেই।  অভিশপ্ত বিমানের দুটির মধ্যে একটি ব্ল্যাক বক্সের খোঁজ মিলেছে বলে খবর সূত্রের।  খোঁজ মিলেছে ককপিট ভয়েস রের্কডারেরও, খবর সূত্রের।  ব্ল্যাক বক্সের খোঁজ পাওয়ায় এবার দুর্ঘটনার কারণ জানা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।