নয়াদিল্লি: বিমানে সওয়ার ২৪২ যাত্রী। কিন্তু আকাশ ছোঁয়ার আগেই বিপর্যয়। সটান বহুতলে ধাক্কা, তার পর তীব্র বিস্ফোরণ। আমদাবাদে আছড়ে বড়ল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণী-সহ বিমানে সওয়ার ছিলেন VVIP লোকজন। এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে কল্পনাও করতে পারেননি কেউ। কিন্তু বছর খানেক আগেই এমন বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী হয়েছিল। (Ahmedabad Plane Crash)
বৃহস্পতিবার আমদাবাদে যে বিমানটি ভেঙে পড়েছে, সেটি আমেরিকার Boeing সংস্থার একটি ৭৮৭-৮ বিমান। ১২ বছর ধরে পরিষেবা দিচ্ছিল। বোয়িংয়ের বিমানের গুণমান নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। সেই আবহেই ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে স্য়াম স্যালেপোর নামের এক ব্যক্তি চাঞ্চল্যকর দাবি করেন। স্যাম বোয়িংয়ে কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আমেরিকার সেনেটের একটি কমিটির সামনে হাজিরা দেন তিনি। (Boeing 787-8 Flight Crash)
সেখানে বোয়িংয়ের তৈরি বিমানের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন করা হয় স্যামকে। কখনও বিমানের চাকা খুলে যাচ্ছে, কখনও যন্ত্রাংশ খুলে পড়ছে, কখনও আবার দেহে ফাটল ধরছে কেন জানতে চাওয়া হয়। বিশেষ করে 787 সিরিজের যে বিমানগুলি, তার গুণমান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এতে স্যাম জানান, বিমান তৈরিতে শর্টকাটের রাস্তা ধরা হচ্ছে। চাহিদার জোগান দিতে আপস করা হচ্ছে গুণমানের সঙ্গে। (Sam Salehpour)
BBC জানিয়েছে, Boeing সংস্থায় দীর্ঘ ১৭ বছর কর্মরত ছিলেন স্যাম। কেন সংস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করছেন প্রশ্ন করা হলে, স্যাম বলেন, “এখনই মুখ না খুললে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। কোনও বাণিজ্যিক বিমান দুর্ঘটনাগ্র্সত হতে পারে, যাতে শত শত মানুষের প্রাণ যেতে পারে। আমি সতর্ক করলেও আমল দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়, ডেলিভারিতে যেন দেরি না হয়। নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে যেখানে, এমন সংস্কৃতি কাম্য নয়। সমস্যার কথা বলতে গেলে হুমকি দেওয়া হয়।” স্যাম জানান, ৭৮৭ সিরিজের বিমানগুলির দেহের যে মূল কাঠামো, সেই Fuselage-এর অংশগুলির মধ্যে ব্যবধান থেকে যাচ্ছে। পরিষেবাপ্রদানের সঙ্গে যুক্ত ১০০০ বিমানের উপর এর প্রভাব পড়ছে। সমস্যার কথা জানাতে গেলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, ভীতি প্রদর্শন করা হয় বলেও সেই সময় জানান স্যাম।
২০২৪ সালে আলাস্কা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান মাঝ আকাশে থাকাকালীন দরজার প্লাগ খুলে যায়। তদন্তে জানা যায়, প্লাগে যে চারটি বোল্ট বসানোর কথা, সেগুলি ছিল না। বিমান সংস্থার হাতে বিমানটি তুলে দেওয়ার আগে প্লাগ বসানো হলেও, বোল্ট দিয়ে তা আটকানো হয়নি বলে উঠে আসে তদন্তে। এর পরও এমন একাধিক ঘটনা সামনে আসে। আর তাতেই Boeing-এর তৈরি বিমানের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
সেই সময় সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হন স্যাম। জানান, যাত্রী নিরাপত্তার কথা বলতে গেলে ৪০ মিনিট ধরে তাঁকে ভর্ৎসনা করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এমনকি তাঁকে হেনস্থা করতে গাড়ির চাকাও ফুটো করে দেওয়া থেকে নানা পন্থা অবলম্বন করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। ৭৮৭ সিরিজের সমস্ত বিমান ফিরিয়ে এনে পরীক্ষা করে দেখার দাবিও তোলেন স্যাম। স্যাম ছাড়াও তিন জন Boeing-এর বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশেন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এক প্রাক্তন কর্তাও সরব হন।
Boeing-এর প্রাক্তন কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার জন ব্যারেট, মেকানিক্যাল কর্মী রিচার্ড কোয়েভাসও মুখ খুলেছিলেন। জন দাবি করেন, নিম্ন মানের যন্ত্রাংশ বসানো হয় বিমানে। অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও ত্রুটিপূর্ণ ছিল। মৃত্যুর পর জনের পরিবার মামলাও দায়ের করে। জানান, Boeing-এর বিরুদ্ধে মুখ খোলার পর উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন তিনি, শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। অন্য দিকে, রিচার্ডও বিমান তৈরির ক্ষেত্রে অনিয়ম, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিয়োগ তোলেন। ৭৮৭ সিরিজের বাল্কহেড নিয়ে বিশেষ করে অভিযোগ জানান।
সেই নিয়ে ফেডারেল এভিয়েশেন ছয় সপ্তাহ ধরে Boeing-এর বিভিন্ন কারখানা অডিট করে, তাতে নানা অনিয়ম উঠে আসে। নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে একাধিক প্রশ্ন ওঠে। ম্যানেজমেন্ট এবং ফ্লন্টলাইন কর্মীদের মধ্যে সংযোগের অভাবও ধরা পড়ে। যদিও Boeing সেই সময় জানায়, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী তারা। কিন্তু আমদাবাদে ওই সিরিজের বিমান ভেঙে পড়ার পরই ওই পর্দাফাঁসের প্রসঙ্গ উঠে আসছে।