নয়া দিল্লি: আশ্চর্যজনকভাবে প্রাণে বেঁচে যান বিমানের একজন যাত্রী বিশ্বাসকুমার রমেশ। জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া বিমানের ধ্বংসস্তূপ থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসেন ওই যাত্রী। কী বলা যেতে পারে? অবিশ্বাস্য? পুনর্জন্ম? মৃত্যুঞ্জয়ী? আমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে দুর্ঘটনায় বিমানযাত্রী এবং বিমানের কর্মী মিলিয়ে ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এই বিপর্যয় থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন মাত্র একজন! তিনি বিশ্বাসকুমার রমেশ। 

Continues below advertisement

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিজেকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। অনেকের কাছে তিনি "সবচেয়ে ভাগ্যবান জীবিত ব্যক্তি", কিন্তু সেই ব্যক্তই বলছেন আজ, 'শারীরিক ও মানসিকভাবে বেঁচে থাকাটা এখন দুর্বিসহ হয়ে গেছে'। 

অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়ার পর একাকী এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির বক্তব্য  তার বেঁচে থাকাটা একদিকে যেমন অলৌকিক ঘটনা, অন্যদিকে অভিশাপ। সেদিনের দুর্ঘটনায় দাদাকে হারিয়েছিলেন তিনি। নিজে বেঁচে ফিরলেও দাদাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

Continues below advertisement

সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বিশ্বাসকুমার রমেশ একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'সেই দিনের স্মৃতি আজও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। এখন আমি একা থাকতেই পছন্দ করি। আমি কেবল আমার ঘরে একা বসে থাকি। আমার স্ত্রী, আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। আমি কেবল আমার বাড়িতে একা থাকতে পছন্দ করি। আমি নই আমার মা-ও শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। রাতে আমার ঘুম হয় না।'    

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যে তার পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) ধরা পড়েছে। তিনি শারীরিক ব্যথা এবং মানসিক আঘাত দুইয়ের সঙ্গে লড়াই করছেন। বিশ্বাসকুমার রমেশ বিবিসকে সাক্ষাৎকারে বলেন, "যখন আমি হাঁটি, ঠিকমতো হাঁটতে পারি না, ধীরে ধীরে হাঁটতে হয়। আমার স্ত্রী সাহায্য করে।' 

নিজের বেঁচে যাওয়াকে ‘অলৌকিক’ ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে রমেশ জানিয়েছেন জীবনের প্রায় সবকিছু হারিয়ে ফেলেছেন। বিশেষ করে দাদা অজয়ের জন্য দুঃখ হয় তার। অজয় সেই একই বিমানে কয়েকটি আসন দূরে ছিলেন। মারা যাওয়া ২৪১ যাত্রীর মধ্যে ছিলেন অজয়ও।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রমেশ বিবিসিকে বলেন, “আমি একমাত্র বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি, আমি বিশ্বাস করতে পারি না। এটি ছিল অলৌকিক ঘটনা। দুর্ঘটনায় আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি। সে ছিল আমার মেরুদণ্ড। গত কয়েক বছর সে আমাকে সবসময় সহায়তা করেছে।” চিকিৎসা হলেও পা, কাঁধ, হাঁটু এবং শরীরের পেছন দিকে এখন ব্যথা অনুভব করেন বিশ্বাসকুমার রমেশ।  দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি কোনও কাজ করতে পারেন না। গাড়িও চালাতে পারেন না। 

২০০৩ সাল থেকে ব্রিটেনে থাকেন রমেশ। স্ত্রী এবং সন্তানেরা সেখানেই রয়েছেন। রমেশ ভারতে এসেছিলেন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে। ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে পড়া ড্রিমলাইনারের 11A সিটে ছিলেন বিশ্বাসকুমার রমেশ। আজ বেঁচেও যেন 'অভিশাপ' নিয়েই জীবন চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।