অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার : অনলাইন গেম, ফ্রি-ফায়ারের আসক্তিতেই বন্ধুত্ব। সেই প্রলোভনে বাড়ি ছেড়ে পলাতক নাবালিকাকে ১২ মাস পর উত্তরপ্রদেশ থেকে উদ্ধার করে আনল কালচিনি থানার পুলিশ। আলিপুরদুয়ার আদালতের নির্দেশে সিডব্লুসি-র মাধ্যমে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল নাবালিকাকে। অনলাইন গেম থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখার আহ্বান স্বস্তি ফিরে পাওয়া নাবালিকার মায়ের।
 
আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি থানা এলাকার বাসিন্দা ১৬ বছরের ওই নাবালিকা দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা পুলিশের ইএফআর বিভাগে কর্মরত। গৃহবধূ মা-এর সঙ্গেই থাকত নাবালিকা। গত বছর ২৮ অগাস্ট বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় নাবালিকা। পরিবারের তরফে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় কালচিনি থানায়। তদন্ত শুরু করে পুলিশ। 


পরিবার এবং পুলিশি তদন্তে জানা যায়, ওই নাবালিকা অনলাইন গেম "ফ্রি-ফায়ারে" আসক্ত ছিল। সেই গেমের মাধ্যমেই বন্ধুত্বের নামে উত্তরপ্রদেশ-দিল্লির একটি চক্রের চক্করে পড়ে মেয়েটি । অভিযোগ পাওয়ার পর সাইবার ক্রাইম দফতরের সাহায্যে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দিল্লি পাড়ি দেয় কালচিনি থানার পুলিশ। দিল্লি পুলিশের সাহায্যে ইস্ট দিল্লি থেকে গ্রেফতারও করা হয় এই চক্রের এমডি নিক্কেল নামে  এক যুবককে। যদিও সে এখন জামিনে মুক্ত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরেই বিভিন্ন মোবাইল নম্বর ট্র‍্যাক করে উত্তরপ্রদেশের হামিরপুর জেলার রথ থানার অন্তর্গত টঙা গ্রামের এক বাড়ি থেকে উদ্ধার করে গতকাল আলিপুরদুয়ারে নিয়ে আসা হয় নাবালিকাকে।


যদিও পুলিশি অভিযানে সেই সময় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে পুলিশ, চক্রের পান্ডার সন্ধানে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। আজ আলিপুরদুয়ার আদালতে নাবালিকার জবানবন্দির পর সিডব্লুসি-র মাধ্যমে নাবালিকাকে পরিবারের হাতে তুলে দেয় আদালত। স্বস্তিতে পরিবার।


আলিপুরদুয়ার জয়গাঁও-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নাবালিকা অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে বন্ধুত্বের নামে একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে। প্রলোভনে পাড়ি দেয় উত্তরপ্রদেশ। তদন্তে নেমে সাইবার ক্রাইম দফতরের সাহায্যে দিল্লি থেকে একজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে সূত্র পাওয়া যায়। উদ্দেশ্য ছিল, যে কোনও মূল্যেই উদ্ধার করতে হবে নাবালিকাকে। সেটা সম্ভব হয়েছে। চক্রের সন্ধানে তদন্ত চলবে। তবে অনলাইন গেমের খারাপ প্রভাব থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখার আর্জি রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।


উদ্ধার হওয়া নাবালিকার মা বলেন, আমার মেয়ে ফ্রি-ফায়ার গেমে আসক্ত ছিল। যার মাধ্যমেই মেয়ে উত্তরপ্রদেশ পাড়ি দেয়। কীভাবে গেছে জানি না। কারও বাচ্চার সাথে যেন এমন না হয়। তার জন্য অভিভাবকদের প্রতি সচেতনতার বার্তাও দেন তিনি। তবে মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশি নাবালিকার মা ধন্যবাদ জানান পুলিশ সহ বাকিদের।