নয়াদিল্লি: ভারতে চিতার পুনঃপ্রবর্তন, তাও আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিনে নমিবিয়া থেকে এসে পৌঁছেছিল আটটি চিতা। নিজেহাতে খাঁচা খুলে সেগুলিকে এনক্লোজারে ছেড়ে দেন তিনি, ছবিও তোলেন হাই রেজলিউশন ক্যামেরা তাক করে। সেই নিয়ে কম হইচই, প্রচার হয়নি দেশে। কিন্তু তার পর থেকে যত সময় এগিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে (Kuno National Park) একের পর এক চিতার মৃত্যু ঘটছে। শুক্রবার সেখানে সূর্য নামের একটি চিতার মৃত্যু হল (Cheetah Deaths)। গত চার মাসেরও কম সময়ে এই নিয়ে সেখানে আটটি চিতার মৃত্যু ঘটল। গতবছর নমিবিয়া থেকে সবমিলিয়ে যে ২০টি  চিতা ভারতে আনা হয়েছিল, তার মধ্যে আটটির মৃত্যু হয়েছে ইতিমধ্যেই। 


গত বছর ২৭ মার্চ প্রথন সাশা নামের একটি চিতার মৃত্যু হয়। কিডনি বিকল হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায় সেই সময়। এর পর ২৪ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় উদয়। সঙ্গমে লিপ্ত হতে গিয়ে ৯ মে মারা যায় দক্ষা নামের তৃতীয় চিতাটি। যে তিনটি চিতা শাবকের জন্ম হয়েছিল, মে মাসে মৃত্যু হয় তাদেরও। এর পর গত মঙ্গলবার তেজস নামের সপ্তম চিতাটির মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, একটি স্ত্রী চিতার সঙ্গে মারামারি করতে গিয়ে আহত হয়ে মারা যায় তেজস। এবার মৃত্যু হল অষ্টম চিতা সূর্যের। 


ব্যাঘ্র পরিবারের সদস্য চিতা প্রতিপাালনে ভারতের দক্ষতা এবং যোগ্যতা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন বন্যপ্রাণ প্রেমী থেকে পশুপ্রেমীরা। একের পর এক চিতার মৃত্যুতে সেই প্রশ্ন নতুন করে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। দেহরাদূণের ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডিন ওয়াইভি ঝালার মতে, ভারতে চিতার পুনঃপ্রবর্তনে মৃত্যু ঘটবে বলে নিশ্চিত ছিল আগে থেকেই। কিন্ত এনক্লোজারের মধ্যে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। 


আরও পড়ুন: Chandrayaan 3: পৌঁছয় না সূর্যের আলো, চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, চাঁদের বিপজ্জনক দক্ষিণ মেরুতেই অবতরণ করবে ‘চন্দ্রযান-৩’


তেজসের মৃত্যুতে স্ত্রী চিতার হাতে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এমনটা আগে কোথাও ঘটেনি বলে জানন ঝালা। চিতা শাবকগুলির মৃত্যু নিয়ে তাঁর মত, চিত শাবকগুলি অপুষ্টিতে ভুগছিল। তাদের সুস্থ রাখার জন্য সাপ্লিমেন্টসের প্রয়োজন ছিল। তা না হওয়াতেই ভারতের পরিবেশের সঙ্গে চিতাশাবকগুলি মানিয়ে নিতে পারেনি এবং শেষ মেশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বলে জানান ঝালা। 


ভারতে চিতার পুনঃপ্রবর্তনের পরিকল্পনা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন তুলছিলেন বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, আফ্রিকান চিতার বেড়ে ওঠার মতো অনুকুল পরিবেশ নয় ভারতের। শুধু তাই নয়, আফ্রিকান চিতা যে ধরনের প্রাণী শিকার করে, যে খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে, সেই প্রজাতির প্রাণীও ভারতে নেই বলে মত ছিল তাঁদের। 


আজ থেকে প্রায় সাত দশক আগে ভারত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় চিতা।  ১৯৫২ সালে সরকারি ভাবে চিতাকে ভারতে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। শেষ বার ১৯৪৮ সালে চিতার উল্লেখ পাওয়া যায় সরকারি রেকর্ডে। তার পর ফের নতুন করে চিতা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আগামী দিনে ভারতে মোট ১০০টি চিতা আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু পর পর চিতার মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়ছে সরকারি পরিকল্পনা।