নয়াদিল্লি: সেনাবাহিনীতে মেয়েদের নিযুক্তি ঘটলেও, বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠে আসে লাগাতার। সেই আবহেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢাললেন এক সেনা আধিকারিক। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত মহিলাদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তিনি, তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কর্নেল পদে কর্মরত মহিলা অফিসারদের নিয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন তিনি। (Report on Women Colonels)
লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব পুরি নিজের অধীনে কর্মরত মহিলা কর্নেলদের নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেন। গত ২০ নভেম্বর ১৭ নম্বর মাউন্টেন স্ট্রাই কর্পসে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়। ওই রিপোর্ট তিনি পাঠান ইস্টার্ন কম্যান্ডের কম্যান্ডিং-ইন-চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রামচন্দ্র তিওয়ারিতে ওই রিপোর্চ পাঠান তিনি, যা সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। (Women Officers in Army)
রিপোর্টে বলা হয়েছে-
- মহিলা কর্নেলরা যেখানে নেতৃত্বে রয়েছেন, সেখানেই ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে মহিলা কর্নেলদের মধ্যে, অন্য অফিসার এবং অধস্তনদের প্রতি সমবেদনা নেই তাঁদের। পারস্পরিক মীমাংসার পরিবর্তে কর্তৃত্ব জাহির নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
- বাড়াবাড়ি রকমের অভিযোগ-অনুযোগ উঠে আসে মহিলা কর্নেলদের কাছ থেকে। ছোটখাটো ঝামেলা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে সরাসরি সিনিয়র কমান্ডারদের কাছে পাঠানো হয়। মহিলা কর্নেলদের নেতৃত্বাধীন ইউনিটগুলিকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য 'চ্যালেঞ্জিং' বলেও উল্লেখ করা হয়।
- 'আমিই ঠিক, বাকি কেউ নয়', এমন মনোভাব রয়েছে মহিলা কর্নেলদের। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে। তাঁদের একতরফা সিদ্ধান্তে জুনিয়রা কোণঠাসা।
- ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মহিলা কর্নেলরা বেশি ভাবিত। অন্যের কথা ভাবেন না। পুরুষ কর্নেলদের মধ্যে কিন্তু এমনটা লক্ষ্য করা যায় না।
পুরুষদের মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করতে কোনও কোনও মহিলা কর্নেল অত্যন্ত কঠোর নীতি নিয়েছেন। - অতি সামান্য কিছুতেও সবসময় মহিলা কর্নেলরা উদযাপনে মেতে ওঠেন। এতে নেতৃত্বেরদানের ক্ষমতায় প্রভাব পড়তে পারে। সারাক্ষণ প্রশংসা পাওয়ার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায় মহিলা কর্নেলদের মধ্যে।
- মহিলা অফিসারদের পোস্টিং দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের লিঙ্গকে যেন প্রাধান্য দেওয়া না হয়, তাঁদের কাজের যেন নিরপেক্ষ পর্যালোচনা হয়, তাও লেখা রয়েছে রিপোর্টে। স্বামী-স্ত্রী কাছাকাছি মোতায়েন থাকলে, বাড়তি সহানুভূতি দেখিয়ে যাতে তাঁদের কাছাকাছি না রাখা হয়, তার উল্লেখো রয়েছে।
- শুধুমাত্র সকলের অন্তর্ভুক্তি দেখাতে মহিলাদের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োগ করা কমাতে হবে বলেও লেখা হয়েছে রিপোর্টে।
গত ১ অক্টোবর ওই রিপোর্টটি পাঠানো হয়, তাতে মহিলা কর্নেলদের সামলাতে গিয়ে কী কী সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তা বিশদে উল্লেখ করেন তিনি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহিলা অফিসারদের 'অহংবোধ'কে সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন তিনি। মহিলাদের মধ্যে সাংসারিক কলহের মতো ঝামেলা লেগেই থাকে, বড্ড বেশি অভিযোগ-অনুযোগ করেন তাঁরা এবং সহানুভূতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে লেখা হয় রিপোর্টে।
রিপোর্টটি সামনে আসতেই সেনাবাহিনীতে মেয়েদের কী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়, সেই নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর পুরুষরা মেয়েদের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেন না বলেও দাবি উঠছে। বছর দুয়েক আগে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর ১০৮ জন মহিলা আধিকারিকের পদোন্নতি হয় ভারতীয় সেনায়। কিন্তু মেয়েরা যে আজও সেনায় স্বাগত নন, তা ওই রিপোর্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত জানিয়েছেন অনেকে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ১০৮ মহিলার পদোন্নতি হয় কর্নেল হিসেবে। চিকিৎসা বিভাগের বাইরে সেই প্রথম সেনায় মেয়েদের পদোন্নতি হয়। তার পরও মেয়েদের নিয়ে এমন মানসিকতা কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। যদিও সেনা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, অতি অল্পসংখ্যক মেয়েদের সম্পর্কেই ওই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল পুরি নিজের মতামত জানিয়েছেন, যা আগামী দিনে প্রশিক্ষণের সহায়ক হয়ে উঠবে। কিন্তু মহিলা সেনা আধিকারিকদের সম্পর্কে যে সমস্ত মন্তব্য করেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল পুরি, তাতে আপত্তি তুলেছেন অনেকেই।