নয়াদিল্লি: ঘোষণা মতো আজ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের।  সেই নিয়ে এই মুহূর্তে শোরগোল দিল্লির রাজনীতিতে। আবগারি দুর্নীতি মামলায় তিহাড়ে বন্দি থাকা অবস্থায় বার বার কেজরিওয়ালের ইস্তফার দাবিতে সরব হয়েছিল বিজেপি। সেই সময় দাবিতে কোনও আমলই দেননি কেজরিওয়াল। তাই জামিনে মুক্ত হয়ে হঠাৎ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কেন, সেই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠলেও, কেজরিওয়াল ছক্কা হাঁকিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। (Arvind Kejriwal Resignation)


আবগারি দুর্নীতি মামলাকে গোড়া থেকেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে আসছে আম আদমি পার্টি। নির্বাচনী লড়াইয়ে পেরে না উঠে, ঘুরপথে নেতা-মন্ত্রীদের জেলে পাঠিয়ে বিজেপি দিল্লিতে ক্ষমতাদখল করতে চাইছে বলে অভিযোগ তাদের। রবিবার পদত্যাগের ঘোষণা করেও সেই দাবিতেই অনড় ছিলেন কেজরিওয়াল। তাঁর এই সিদ্ধান্ত বিজেপি-র পাশাপাশি কংগ্রেসকেও সমস্যায় ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। (Arvind Kejriwal)


এর সপক্ষে কিছু যুক্তি দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা-



  • আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের মেয়াদ মেরেকেটে আর পাঁচ মাস। কিন্তু মু্খ্যমন্ত্রী হিসেবে এই কয়েক মাস কেজরিওয়ালের হাত কার্যত বাঁধা। কারণ জামিন দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সই বা গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না তিনি। তাই পাঁচ মাস নামমাত্র মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থেকে যাওয়ার মধ্যে লাভ কিছু দেখছেন না কেজরিওয়াল। বরং জনতার আদালতে নিজেকে রাজনীতির শিকার, পীড়িত ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে এবছর নভেম্বরেই নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন তিনি, যাতে সাধারণ মানুষের সমবেদনা কুড়িয়ে ভোটবাক্স ভরাতে পারেন। 

  • আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়াল, তাঁর উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া-সহ অন্যদেরও জেলে যেতে হয়েছে। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দলের তরফে দাবি করা হলেও, জনমনেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ২০১১ সালে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে জন্ম যে দলের, তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে যথেষ্টই। এমন পরিস্থিতিতে পদত্যাগের ঘোষণা করে কেজরিওয়াল অভিযোগের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। দলের তরফে তাঁর পদত্যাগের সিদ্ধান্তকে 'অগ্নিপরীক্ষা' বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। বোঝানো হচ্ছে, আসলে ক্ষমতার লোভ নেই কেজরিওয়ালের। ফলে মানুষের সমবেদনা কেজরিওয়ালের পক্ষেই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

  • ২০১৩ সাল থেকে দিল্লিতে টানা ক্ষমতায় কেজরিওয়াল। দীর্ঘদিন কোনও সরকার ক্ষমতায় থাকলে, মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। মাথাচাড়া দেয় ক্ষমতাসীন দলকে সরিয়ে পরিবর্তনের দাবি। আবগারি দুর্নীতি মামলায় এমনিতেই দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই পদত্যাগ করে, নতুন ভাবে প্রচার শুরু করতে চাইছেন কেজরিওয়াল। কেন্দ্রের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতের পরও দিল্লিবাসীর জন্য তাঁর সরকারের উন্নয়নমূলক কাজগুলিকে সামনে রেখে এগোতে চাইছেন।

  • ফেব্রুয়ারির বিধানসভা নির্বাচন আরও এগিয়ে আনার জন্য সওয়ার করছেন কেজরিওয়াল। আসলে তিনি বিজেপি বিরোধী হাওয়াকেই কাজে লাগাতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বিজেপি। পাশাপাশি, গোয়েন্দাদের দিয়ে বিরোধীদের হেনস্থা করার অভিযোগেও বিদ্ধ তারা। সেই মহারাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকারকে ফেলে ক্ষমতাদখল হোক, বা ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সরেনের জেলযাত্রা, যেনতেন প্রকারে বিজেপি ক্ষমতায় থাকতে চায় বলে জনমনে একপ্রকার ধারণা তৈরি হচ্ছে, যাকে কাজে লাগাতে চান কেজরিওয়াল। 

  • আচমকা পদত্যাগের ঘোষণা করে কেজরিওয়াল দিল্লিতে কেন্দ্রের খবরদারি এড়ালেন বলেও মনে করা হচ্ছে। দিল্লিতে কার হুকুম চলবে, সেই নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বরাবরের টানাপোড়েন কেজরিওয়ালের। বিপুল জনসমর্থন পেয়ে তিনি নির্বাচিত হলেও, লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মোটামুটি ভাবে কেন্দ্রই পরিচালনা করছে। এমনকি কেজরিওয়াল যখন জেলবন্দি, সেই সময় বিজেপি-র তরফে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিও উঠছিল। সেই আবহেই শর্তসাপেক্ষে তাঁকে জামিন দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা যখন তাঁর হাতে নেই, এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবিতে ফের সরব হতে পারত বিজেপি, তাতে নির্বাচনও পিছিয়ে যেত। পদত্যাগের ঘোষণা করে, নির্বাচন এগিয়ে আনার দাবি করে, বিজেপি-র সেই পরিকল্পনায় কেজরিওয়াল জল ঢেলে দিলেন বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।