নয়াদিল্লি: নগদ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত। রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে তোলা হয়েছে প্রশ্ন। তার পরও থানার কোনও লক্ষণ আপাতত দেখাচ্ছেন না দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal)। বরং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণের ধার আরও বাড়ালেন (PM Modi Degree)।


শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সুর চড়ালেন


প্রধানমন্ত্রী মোদি ডিগ্রি আসলে ‘ভুয়ো’ বলে এ বার অভিযোগ করলেন কেজরিওয়াল। শুধুমাত্র ট্যুইট করে নয়, শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সুর চড়ালেন তিনি।  প্রধানমন্ত্রী কেন ডিগ্রি দেখাতে ইতস্তত করছেন, প্রশ্ন তুললেন কেজরিওয়াল।


শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি নিয়ে সরব হলেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সংশয় আরও বেড়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী কতদূর পড়াশোনা করেছেন, জানতেই পারছেন না মানুষ। কয়েক বছর আগে অমিত শাহ সাংবাদিক বৈঠক করে ডিগ্রি দেখিয়েছিলেন। ডিগ্রি যদি রয়েইছে এই ডিগ্রি যদি যথার্থ হয়, তাহলে দেখাতে সমস্যা কোথায়? গুজরাত এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছে না কেন?”


প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি না দেখানোর সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে, তা-ও এ দিন ব্যাখ্যা করেন কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি না দেখানোর পিছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে। হতে পারে, অহঙ্কারী তিনি। ভাবতে পারেন, ‘আমি কেন ডিগ্রি দেখাব! আমার ডিগ্রি দেখতে চাওয়ার এরা কে? এদের কী যোগ্যতা?’ কিন্তু গণতন্ত্রে এমন অহঙ্কার ঠিক নয়। মানুষ জবাব জানতে চাইলে, দিতে হয়।”



আরও পড়ুন: Arvind Kejriwal: ‘প্রধানমন্ত্রীর কাজের সঙ্গে ডিগ্রির সম্পর্ক কী’! মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতা জানতে চাওয়ায় জরিমানা কেজরিওয়ালকে


কেজরিওয়াল আরও বলেন, “আবার হতে পারে যে, ভুয়ো বা নকল বলেই ডিগ্রি দেখানো হচ্ছে না। মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরছে। প্রধানমন্ত্রী গুজরাত এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকলে, তাদের তো ফলাও করে তা বলে বেড়ানো উচিত! এত লুকোছাপা কেন, সেটাই বুঝতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। ”


তথ্য জানার অধিকার আইনে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিশদ তথ্য় জানতে চান কেজরিওয়াল। তাতে তৎকালীন কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার এম শ্রীধর আচারিউলু প্রধানমন্ত্রীর দফতর, গুজরাত ইউনিভার্সিটি এবং দিল্লি ইউনিভার্সিটিকে প্রধানমন্ত্রীর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের ডিগ্রির বিশদ জানাতে নির্দেশ দেয়। 


গুজরাত ইউনিভার্সিটির তরফে দ্রুত সেই সংক্রান্ত তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে তথ্য কমিশনের নির্দেশকে চ্য়ালেঞ্জও জানায় তারা। নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর পর বিজেপি-র তরফেও প্রধানমন্ত্রীর ডিগ্রি বলে কিছু প্রতিলিপি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে কলাবিভাগে স্নাতক হন প্রধানমন্ত্রী। তার পর গুজরাত ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর স্তরের ডিগ্রি অর্জন করেন। 


কিন্তু ওই নথির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেজরিওয়াল। তাতে স্পষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করেন। সেই বিতর্ক আজও মেটেনি। গত মাসে গুজরাত হাইকোর্টে এ নিয়ে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, দিল্লি এবং গুজরাত ইউনিভার্সিটি তথ্য জানাতে বাধ্য নয়। সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য ছিল, "পদাধিকারী ব্যক্তি ডক্টরেট না অশিক্ষিত, গণতন্ত্রে এ সবে কিছু যায় আসে না। এর সঙ্গে কোনও জনস্বার্থও জড়িয়ে নেই। বরং এতে গোপনীয়তা রক্ষা প্রভাবিত হচ্ছে।" প্রধানমন্ত্রীর কাজের সঙ্গে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি করেন। কারও কৌতূহল এবং ছেলেমানুষি মেটানোর দায় নেই বলেও জানান তিনি।


শুক্রবার গুজরাত হাইকোর্ট কেজরিওয়ালকে ভর্ৎসনা করে


এর পরই শুক্রবার গুজরাত হাইকোর্ট কেজরিওয়ালকে ভর্ৎসনা করে। আদালত জানায়, "যাবতীয় তথ্য নাগালের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও, তথ্য জানার আইনকে ব্যবহার করে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্য হাতে পেতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তাতে তাঁর অভিসন্ধি নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধাই স্বাভাবিক। তথ্য জানার আইনের আওতায় যা পড়ে না,  তা নিয়ে খামোকা বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।" কেজরিওয়ালকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে আদালত।