কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও অনির্বাণ বিশ্বাস: মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট সামনে আসার পর, আদানিদের শেয়ারে ধস নেমেছে। এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, কারচুপি করে শেয়ারের দর বাড়িয়েছিল আদানি শিল্পগোষ্ঠী। কিন্তু বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, এমনটা হয়ে থাকলে সেবি, SFIO-র মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা কী করছিল?
কংগ্রেসের প্রশ্ন, যে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ED বিরোধীদের বিরুদ্ধে এত সক্রিয় তারা কী করছে?
গৌতম আদানির ব্য়বসা নিয়ে এখন দেশজোড়া প্রশ্ন। প্রশ্নের কারণ একটাই, মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট। এক কথায় হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা। কর্পোরেট জালিয়াতি এবং চোখে ধুলো দেওয়ার মতো ঘটনাগুলি ফাঁস করাই হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের মূল লক্ষ্য।
এর আগে নিকোলা, ক্লোভার হেলথ, টেকনোগ্লাসের মতো সংস্থার শেয়ার জালিয়াতির রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল তারা। আদানি গোষ্ঠী তাদের সেই রিপোর্ট অস্বীকার করলেও, প্রায় প্রতিদিনই কিন্তু আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার হু হু করে পড়ছে। আর সেইসঙ্গে বিরোধীরা প্রশ্ন করছে, একটা বিদেশে সংস্থার রিপোর্টে যখন এই বিস্ফোরক দাবি করা হচ্ছে, তখন শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি কী করছিল? সেবি কি বিশেষ কোনও কারণে চোখ বুজে ছিল? কোনও প্রভাবশালীর নির্দেশে তারা দেখেও দেখেনি?
কংগ্রেসের প্রশ্ন, যে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ED বিরোধীদের বিরুদ্ধে এত সক্রিয় তারা কী করছে? কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের অন্তর্গত রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানি কী করছিল? আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস বা SFIO কী করছিল এত দিন? কেন্দ্রীয় সরকার এখন কী করছে?
এর আগে, রোজভ্য়ালি কেলেঙ্কারি ঘিরে যখন উত্তাল হয়ে উঠেছিল বাংলা, তখনও প্রশ্ন উঠেছিল, অনুমতি ছাড়া সেবির চোখের সামনে দিয়ে কী ভাবে এই চিটফান্ডগুলি বছরের পর কোটি কোটি টাকা তুলেছিল? এবারও সেই একই প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: LIC Exposure to Adani Group: ‘জিন্দেগী কে সাথ ভি, জিন্দেগী কে বাদ ভি’, শ্রুতিকথা হয়ে যাবে না তো! সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় কোটি কোটি মানুষ
এরইমধ্য়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সরব হয়েছেন। ট্যুইটারে তিনি লেখেন, "বিশিষ্ট আইনজীবী সেরিল শ্রফকে অত্য়ন্ত শ্রদ্ধা করি। কিন্তু, তাঁর মেয়ের বিয়ে হয়েছে গৌতম আদানির ছেলের সঙ্গে। কর্পোরেট গভর্নেন্স এবং ইনসাইডার ট্রেডিং সংক্রান্ত সেবি-র কমিটিতে রয়েছেন সেরিল শ্রফ। সেবি যদি আদানির বিষয়টি খতিয়ে দেখে, তাহলে সেরিল শ্রফের এর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত।"
বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, দেশে বিভিন্ন ব্য়াঙ্ক অকাতরে আদানি গোষ্ঠীকে ঋণ দেয়! আর তা দিয়েই তাদের ব্য়বসার রমরমা। পুরোটাই ঋণ নির্ভর। পরিসংখ্য়ান বলছে। আদানির ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা। এর মধ্য়ে ভারতীয় ব্য়াঙ্কগুলি প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে আদানিকে।
এর মধ্য়ে SBI ২১ হাজার কোটি, ও PNB ঋণ দিয়েছে ৭ হাজার কোটি, এলআইসি বিনিয়োগ করেছে ৩৬ হাজার কোটি। অন্য দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে,বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দেখা যাচ্ছে, দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। মূলধনের পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণগত মান, নগদের যোগান এবং লাভের অঙ্কের মতো বিভিন্ন প্যারামিটার ঠিক রয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিও এ বিষয়ে তাঁদের দেওয়া নির্দেশিকা মেনে কাজ করছে।
SBI ২১ হাজার কোটি, ও PNB ঋণ দিয়েছে ৭ হাজার কোটি, এলআইসি বিনিয়োগ করেছে ৩৬ হাজার কোটি
নিয়ন্ত্রক এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরবিআই ব্যাঙ্কিং সেক্টর এবং ব্যাঙ্কগুলির উপর অবিরাম নজরদারি বজায় রেখে চলেছে।