নয়াদিল্লি: মরা গাঙে স্রোত আনতে কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত পদযাত্রা। হাতে নাতে তার ফল পেয়েছেন রাহুল গাঁধী। জনমনে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে যেমন, কংগ্রেসও ফের গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। কিন্তু দলের অভ্য়ন্তরীণ দ্বন্দ্বে বিরামের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এখনও পর্যন্ত। চলতি বছরেই বিধানসভা নির্বাচন রাজস্থানে। তার আগে ফের সংঘাতের অবস্থানে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন অশোক গহলৌত এবং সচিন পায়লট। এবার পুরনো দ্বন্দ্ব ফের উস্কে দিলেন গহলৌত। (Ashok Gehlot-Sachin Pilot)


এ বছর নভেম্বর মাসে রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া কংগ্রেস। কিন্তু দলের শীর্ষ দুই নেতার দ্বন্দ্ব ফের তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এবার সচিন নন, গহলৌত দলের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলেছেন। তাঁর দাবি, তিনি চাইলেও, মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি তাঁকে ছাড়তে চাইছে না কোনও ভাবেই। (Rajasthan Assembly Election 2023)


গহলৌতের বক্তব্য, "এক মহিলা বললেন, 'ইশ্বরের কৃপায় আপনিই চতুর্থ বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হোন'। আমি ওঁকে বললাম, আমি মুখ্যমন্ত্রির পদ ছেড়ে দিতে চাই, কিন্তু পদ আমাকে ছাড়ছে না এবং আগামী দিনে হয়ত ছাড়বেও না।" সেখানেই থামেননি গহলৌত। বরং যুক্তি দেন, তাঁর মধ্যে কিছু না কিছু নিশ্চয়ই দেখেছে দল। যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিন-তিন বার তাঁকে চয়ন করেছে।


আরও পড়ুন: Air India Express: নয়া রঙে সেজে উঠল এয়ার ইন্ডিয়া বিমান, পুজোর মুখে প্রকাশিত নতুন 'লুক'


গহলৌত যদিও সরাসরি কারও নাম মুখে আনেননি, কিন্তু সচিনকে বিঁধতেই তিনি এমন মন্তব্য করেছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরে। রাজস্থানের দুই হেভিওয়েট নেতা গহলৌত এবং সচিন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম, দু'জনের পরিবারই কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু রাজস্থান কংগ্রেসের তাঁদের পৃথক গোষ্ঠী রয়েছে। আর এই দ্বন্দ্বের নেপথ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পদ। 


রাজস্থানে বিপুল জনপ্রিয়তা গহলৌত এবং সচিনের। তরুণ প্রজন্মের নেতা হিসেবে পায়লটের গ্রহণযোগ্যতা তুলনায় বেশি দলের কর্মীদের মধ্যে। ২০১৮ সালে রাজস্থানে ক্ষমতাদখল করে কংগ্রেস। নির্বাচনী প্রচারে যেহেতু সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন সচিন, তাই তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবি ওঠে। কিন্তু নির্বাচনী বিধায়কদের মধ্যে অনুগামীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাতে বাধ সাধেন গহলৌত। তিনিও কুর্সির দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত গহলৌতকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো হয়। 


শোনা যায়, গহলৌতকে সেবার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হলেও, পালাবদল করে প্রথম আড়াই বছর গহলৌত এবং পরের আড়াই বছর সচিন মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে ঠিক করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাতে নিমরাজি হয়ে যান সচিনও। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কুর্সি ছাড়েননি গহলৌত। তাতে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন সচিন। দিল্লিতে গাঁধী পরিবারের বাসভবনেও যান। এর পাল্টা নিজের অনুগামীদের একজোট করে ক্ষমতাপ্রদর্শন করেন গহলৌত। তাই তাকে চটাতে চাননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। পরের নির্বাচনে সচিনকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়ার কথাও উঠে আসে সেই সময়। তাতে পরিস্থিতি সাময়িক শান্ত হয়।


 এর পর গহলৌতকে বলতেও শোনা যায়, "আমি ক্ষমা করে, ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ায় বিশ্বাসী। কংগ্রেসে কারও মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। সকলের মতামত নিয়েই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সচিন পায়লট এবং তাঁর সমর্থকদের জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তেও আমি শামিল রয়েছি। তাঁদের পক্ষেই রয়েছি আমি।" কিন্তু আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি তাঁকে ছাড়তে চাইছে না বলে ফের সংঘাত উস্কে দিলেন গহলৌত। 


আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজস্থানে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, এখনও পর্যন্ত নাম চূড়ান্ত করেনি কংগ্রেস। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সম্প্রতি কংগ্রেস নির্বাচন কমিটির সঙ্গৈ বৈঠকও করেন, প্রার্থিতালিকা চূড়ান্ত করেন। আগামী নির্বাচনেও ফের কংগ্রেসই ক্ষমতায় আসছে বলে ঘোষণা করলেও, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম নিয়ে এখনও মুখে কুলুপ দলীয় নেতৃত্বের।