গুয়াহাটি: ফি বছর বন্যা লেগেই থাকে। এ বছরও অন্যথা হল না অসমে। বর্ষা ঢুকতেই জল থৈ থৈ প্রায় গোটা রাজ্য। এই মুহূর্তে বন্যায় বিপর্যস্ত অসম। সবমিলিয়ে সেখানে বন্যায় ৫৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবার। শনিবারই ছ'জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি জেলার প্রায় ২৪ লক্ষ মানুষ। রাজ্য প্রশাসনের দাবি, জল একটু একটু করে নামতে শুরু করেছে। কিন্তু আবহাওয়া দফতর অন্য কথা বলছে। আরও এক সপ্তাহ মতো বৃষ্টি চলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। (Assam Flood Situation)
অসম সরকারের দাবি, এবছর উত্তর অসমেই বন্যার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। অরুণাচল প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডে ভারী বৃষ্টির দরুণ অসমের সমতলভূমিতে জল ঢুকেছে বলে দাবি তাদের। শনিবার বিকেল পর্যন্ত অসমের চার জায়গায় ব্রহ্মপুত্রের জলস্তর বিপদসীমার উপরেই ছিল। বারাক, বুরহি দিহিং, দিখৌ, দিচাং, ধানসিড়ি নদীর জলও একাধিক জায়গায় বিপদসীমার উপরেই রয়েছে। (Assam Floods)
কাছার, কামরূপ, নগাওঁ, গোয়ালপাড়া, বরপেটা, ডিব্রুগড়, বনগাইগাঁও, লখিমপুর, জোরহাট, কোকরাঝড়, করিমগঞ্জ, তিনসুকিয়ার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ৩ হাজার ৫৩৫টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন মানুষজন। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ত্রাণ শিবিরে ৫৩ হাজার ৪২৯ মানুষ আশ্রয় চাইছেন বলে জানা গিয়েছে। বন্যার প্রকোপ থেকে রেহাই পায়নি কাজিরাঙা জাতীয় অরণ্যও। সেখানে এখনও পর্যন্ত ১১৪ প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর, যার মধ্যে রয়েছে ছয়টি গন্ডারও। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ৯৫টি প্রাণীকে উদ্ধার করা গিয়েছে সেখান থেকে।
আরও পড়ুন: Kulgam Encouter: কাশ্মীরের কুলগামে গুলির লড়াই! নিকেশ ৪ জঙ্গি, শহিদ ২ জওয়ান
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সব রকম ভাবে অসমের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এবারের বন্যায় অসমের ৬৮ হাজার ৭৬৯ হেক্টর কৃষিজমি জলের নীচে চলে গিয়েছে। পরিকাঠামোর কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার হিসেব নিকেশ কষা হচ্ছে। বন্যায় ৫৩টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। রাজ্য এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী উদ্ধারকার্যে নেমেছে।
শুক্রবার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে বেরোন হিমন্ত। ডিব্রুগড় এবং শহরের জলমগ্ন এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন তিনি। ক্ষয়ক্ষতি তদারকি করেন। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধীও অসমের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের এই বিপদের সময় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে, উদ্ধারকার্য এবং পুনর্বাসনের কাজে হাত লাগাতে আর্জি জানিয়েছেন। কেন্দ্রকে সব ধরনের সাহায্য় প্রদানের আর্জিও জানিয়েছেন রাহুল।
অসম এমনিতে বন্যাপ্রবণ রাজ্য বলেই পরিচিত। জলচক্র এবং জলবায়ুগত ভাবে স্পর্শকাতর অসম। রাজ্যের উপর দিয়ে ১২০টিরও বেশি নদী বয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে কিছু নদী অরুণাচল প্রদেশ এবং মেঘালয়ের মতো বৃষ্টির হটস্পট থেকে নেমে এসেছেয লাগাতার ভারী বৃষ্টির জেরে সেই নদীগুলি এই মুহূর্তে ফুলেফেঁপে উঠেছে। জায়গায় জায়গায় ধসও নেমেছে অসমে। আরও পাঁচ দিন অন্তত অসমে বৃষ্টি চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।