নয়াদিল্লি: একদিকে নোভেল করোনাভাইরাসের মারণ থাবা সারা বিশ্বে ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে তার মোকাবিলায় ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পরীক্ষানিরীক্ষাও জোরকদমে এগচ্ছে। এই মহাযজ্ঞে সামিল নানা দেশ, ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি। কয়েকটি ক্ষেত্রে আশার ইঙ্গিত মিলেছে। একাধিক দেশে সম্ভাব্য় ভ্যাকসিনের মানবশরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। ফলের আশায় অপেক্ষায় থাকতে হবে কিছুদিন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্য়ালয়ের ভ্যাকসিনটি পরীক্ষানিরীক্ষার পরবর্তী পর্যায়ে পা দিয়েছে। চিনও কিছুটা এগিয়েছে। তাদের ভ্যাকসিনটি ক্লিনিকাল বা হিউম্যান ট্রায়ালের দুটি ধাপ পেরিয়েছে।
অন্য দেশগুলির প্রয়াস কোন স্তরে রয়েছে, দেখে নেওয়া যাক
১. সেপ্টেম্বরেই আসছে অ্যাসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন?
চলতি পরীক্ষানিরীক্ষা সফল প্রমাণিত হলে ব্রিটেনের শীর্ষ ওষুধনির্মাতা কোম্পানি অ্যাসট্রাজেনেকা সেপ্টেম্বরেই করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ২০ লক্ষ ডোজ তৈরি করবে, সেই লক্ষ্যে তারা এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন তাদের চিফ এক্সিকিউটিভ। এই কোম্পানি ভ্য়াকসিন গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিক হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ট্রায়াল শেষ হলেই রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষের কাছে চূড়ান্ত সম্মতি চাইবে তারা। তবে তার আগেই ভ্য়াকসিনের ডোজ তৈরি শুরু করে দিয়েছে।
২. দ্বিতীয় পর্যায়ের হিউম্য়ান ট্রায়াল শুরু করেছে আমেরিকার মডারনা
ম্যাসাচুসেটস-এর শীর্ষ বায়োটেকনোলজি কোম্পানি মডারনা তাদের নতুন করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্ব শুরু করেছে। তারা প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল চালিয়েছিল ৪৫ জনের ওপর। এই পর্বে তারা ৬০০ জনের ওপর ট্রায়াল চালিয়ে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখতে চাইছে। ফোর্বস জানিয়েছে, মডারনা জুলাই নাগাদ তৃতীয় দফার ট্রায়াল শুরুর লক্ষ রেখে এগচ্ছে। তাদের ভ্যাকসিনের নাম mRNA-1273। ফোর্বস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি কারণে অন্য দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফার ট্রায়ালকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতে পারে। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালে দেখা হয়েছে মানুষের ওপর একটি ভ্যাকসিন বা চিকিতসা কতটা নিরাপদ, সেটা। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে তার কার্যকারিতা খতিয়ে দেখা হবে, পাশাপাশি সেটি কতটা নিরাপদ, সে ব্যাপারেও আরও তথ্য মিলবে।
৩. চিনের কোভিড-১৯ ভ্য়াকসিন বাজারে চলতি বছরের শেষে?
যৌথভাবে ভ্যাকসিন তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছে বেজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিকাল প্রোডাক্টস ও চিনের ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোং। তাদের দ্বিতীয় দফার পরীক্ষানিরীক্ষা শেষ। হয়তো চলতি বছরের শেষ বা সামনের বছরের গোড়ায় তাদের ভ্যাকসিন বাজারে আসার জন্য তৈরি হয়ে যাবে। বছরে ১০০ থেকে ১২০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষমতা থাকবে তাদের।


৪. বৃহত্ ওষুধ নির্মাতা সংস্থা পিফাইজারের দাবি, অক্টোবর নাগাদ বেরিয়ে যাবে ভ্যাকসিন
জার্মান mRNA কোম্পানি বায়োএনটেক-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিএনটি১৬২ ভ্যাকসিন কর্মসূচির জন্য আমেরিকা, ইউরোপে ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম অতিবৃহত্ ওষুধ নির্মাতা কোম্পানি পিফাইজার। অক্টোবর নাগাদ কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক ভ্যাকসিন মিলবে বলে আশাবাদী তারা।
সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে ১২০-র ওপরে ভ্য়াকসিন নিয়ে গবেষণা, পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। বর্তমানে ক্লিনিক্য়াল মূল্যায়নের স্তরে রয়েছে অন্তত ১০টি ভ্যাকসিন। ১১৫টি আছে তার আগের পর্যায়ে।