নয়াদিল্লি: পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণের বদলা নিল ভারত। গভীর রাতে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে স্ট্রাইক চালাল ভারতের তিন বাহিনী।  Operation Sindoor অভিযানের আওতায় সেখানকার মোট ন’টি জায়গায় স্ট্রাইক চালিয়েছে ভারত। সামরিক কৌশলের দিক থেকে ওই ন’টি জায়গা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (Operation Sindoor)

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয় জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করে The Resistance Front. সেটি উপত্যকার জঙ্গি সংগঠন হলেও, পাকিস্তানের লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন হিসেবে কাজ করে। তাই পাকিস্তানে স্ট্রাইক চালানোর ক্ষেত্রে লস্কর-ই-তৈবা, জইশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন এবং অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলির প্রশিক্ষণ শিবির, তাদের ঘাঁটিগুলিকে বেছে নেওয়া হয়। (India Strikes in Pakistan)

পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মোট ন’টি জায়গায় সেনা অভিযান চালিয়েছে ভারত, বাহওয়ালপুর, মুরিদকে, গুলপুর, ভিম্বের, চক আমরু, বাঘ, কোটলি, সিয়ালকোট এবং মুজফ্ফরাবাদ। ভারতে নাশকতামূলক হামলার ক্ষেত্রে ওই ন’টি জায়গার সংযোগের ইতিহাস দীর্ঘ। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সন্ত্রাসের যে বাস্তুতন্ত্র, তার শিকড় ওই নয় জায়গায়। 

বাহওয়ালপুর 

বাহওয়ালপুর পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সদর দফতর। পঞ্জাব প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বাহওয়ালপুর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে নাশকতা চালানো হয়, যাতে নেতৃত্ব দয় জইশ-প্রধান মাসুদ আজহার। জইশ ২০০১ সালের সংসদভবন হামলা থেকে ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় সেনার কনভয়ে আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করে।

মুরিদকে

লাহৌর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত মুরিদকে লস্কর-ই-তৈবার প্রশিক্ষণ ঘাঁটি। লস্কর এবং তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জামাত-উদ-দাওয়া সেখান থেকেই যাবতীয় কার্য পরিচালনা করে। ২০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ঘাঁটি। প্রশিক্ষণ শিবিরের পাশাপাশি, দীক্ষাশিবির, সন্ত্রাসের রসদ জোগানর পরিকাঠামোও রয়েছে সেখানে।  ২৬/১১ মুম্বই হামলার জন্য লস্করকেই দায়ী করে ভারত। মুরিদকে-তেই ২৬/১১-র জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

কোটলি

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলি নিয়ে বার বার সরব হয়েছে ভারত। সেখানে জঙ্গিদের, বিশেষ করে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো জঙ্গি এবং উগ্রপন্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, যে কোনও সময় একসঙ্গে ৫০ জন জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে কোটলিতে।

গুলপুর

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জম্মু ও কাশ্মীরের রাজৌরি এবং পুঞ্চে নাশকতা চালাতে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে গুলপুরকে বেছে নেয় জঙ্গিরা। সেখান থেকেই লঞ্চপ্য়াড পরিচালনা করা হয়। কাশ্মীরে সাধারণ মানুষ এবং সেনার কনভয়ে লাগাতার হামলা চালানোর আগে সেখানেই সমবেত হয় জঙ্গিরা।

সাওয়াই

কাশ্মীরে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে সাওয়াইকে ব্যবহার করে জঙ্গিরা। সোনমার্গ, গুলমার্গ, পহেলগাঁওয়ে নাশকতার ঘটনায় বার বার সাওয়াই সংযোগ উঠে এসেছে।

সরজল ও বরনালা

আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখার কাছাকাছি অবস্থিত সরজল ও বরনালা। সেখান দিয়েই জঙ্গিরা ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটায়।

মেহমুনা

সিয়ালকোটের কাছে অবস্থিত মেহমুনা হিজবুল মুজাহিদিনের ঘাঁটি। হিজবুল বরাবরই উপত্যকায় সক্রিয়। এই মুহূর্তে তেমন শক্তি না থাকলেও, সীমান্ত এলাকায় তাদের জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নেয়, সীমান্তের ওপার থেকে যেমন নির্দেশ আসে, তেমন কাজ করে তারা। 

পহেলগাঁও হামলার বদলা নিতে গভীর রাতে এই জায়গাগুলিতেই হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতীয় সেনা, নৌবাহিনী, বায়ুসেনা একসঙ্গে স্ট্রাইক চালিয়েছে পাকিস্তান এবং পাক অধিকত কাশ্মীরে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর এই প্রথম ভারতের তিন বাহিনী একসঙ্গে অভিযান চালাল। Operation Sindoor-এর আওতায় শুধুমাত্র জঙ্গি শিবিরই গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত, পাকিস্তানি সেনা বা তাদের পরিকাঠামোর উপর কোনও আঘাত হানেনি।